আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটের পরিবেশ ও পরিস্থিতি মূল্যায়ন শুরু করেছে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত এ যৌথ মিশন গতকাল রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে তাদের কার্যালয়ে বৈঠক করে। আজ সোমবার তারা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন। আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যবেক্ষক দলটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করবে।
জানা গেছে, নির্বাচনী মূল্যায়ন শুরুর দিন গতকাল সকালে প্রতিনিধি দলটি রাজধানীর আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠক করে। এরপর বিকেল ৩টায় তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী পৃথক বৈঠক করেন। পর্যবেক্ষক দলের প্রতিনিধিরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। তবে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুনিয়াতে যেভাবে নির্বাচন হয় শাসনতন্ত্র মেনে, আমরা সেভাবে নির্বাচন করব। আমাদের শাসনতন্ত্রে নির্বাচনকালীন সরকার বলতে কিছু নেই। পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, তারা সবাই অত্যন্ত পরিপক্ব লোক। তারা অবাধ নির্বাচন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে এসেছেন। তারা জানতে এসেছেন, একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আমরা কী কী কাজ করেছি। তাদের নিজেদের কোনো মতামত নেই। তারা শুধু জানতে চেয়েছেন, কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা বলেছি, সরকার একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা একটা উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই; কিন্তু আমরা চাইলেই হবে না। সংঘাতহীন নির্বাচন নিশ্চিত করতে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতার পাশাপাশি দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বিষয়ে মার্কিন পর্যবেক্ষক দল কোনো বার্তা দেয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ ভোট বর্জনের কথা বলছেন। আমরা চাই, সবাই নির্বাচন করুক। যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি সেই দল জয়লাভ করবে এবং সরকার গঠন করবে। ভোট কারচুপির বিষয়েও সরকার সতর্ক থাকবে বলে জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর ঢাকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দূতাবাসে যায় মার্কিন পর্যবেক্ষক দল। রাতে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সুশীল সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা।
তিন দলের সঙ্গে বৈঠক আজ: মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল আজ সোমবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করবে। আওয়ামী লীগের দপ্তর জানায়, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির প্রতিনিধিরা আজ দুপুর ১২টায় বনানীর শেরাটন হোটেলে মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ ও দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এতে অংশ নেবেন।
বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবীর খান জানান, মার্কিন প্রতিনিধিরা আজ সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এতে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালীর পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, আজ বিকেল ৩টায় হোটেল ওয়েস্টিনে মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে। এতে অংশ নেবেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাসরুর মওলা।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সফররত মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের বৈঠক আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকবেন। বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রতিনিধি দলকে অবহিত করবে কমিশন।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তায় পরিচালিত এই যৌথ পর্যবেক্ষক মিশন গত শনিবার নির্বাচনী পরিবেশ ও পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে ঢাকায় আসে। পর্যবেক্ষক দলে রয়েছেন সাবেক দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল এফ এন্ডারফার্থ, সাবেক ডেপুটি ইউএসএআইডি প্রশাসক বনি গ্লিক, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য মারিয়া চিন আবদুল্লাহ, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাবেক সহযোগী কাউন্সেল জামিল জাফর, এনডিআই এশিয়া-প্যাসিফিকবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক মনপ্রীত সিং আনন্দ ও আইআরআইর এশিয়া-প্যাসিফিক ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর জোহানা কাও। তারা ১৩ অক্টোবর ঢাকা ছাড়বেন।
এনডিআই ও আইআরআইর এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল জানানো হয়, নিরপেক্ষ মার্কিন দুই সংস্থার যৌথ প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী দলটি বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, বিদেশি কূটনীতিক, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর সফর শেষে একটি বিবৃতি দেবে। ওই বিবৃতিতে নির্বাচন আয়োজন বিষয়ে তাদের উদ্বেগ থাকলে তা জানাবে এবং বাস্তবসম্মত সুপারিশ তুলে ধরবে।
এই যৌথ মিশন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতি আগ্রহ ও সমর্থন প্রদর্শন করে উল্লেখ করে পর্যবেক্ষক দলের সদস্য বনি গ্লিক বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রাক্কালে তারা অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী মূল্যায়ন দিতে উন্মুখ হয়ে আছেন।
কার্ল এফ এন্ডারফার্থ বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রস্তুতিতে সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমরা একটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সমর্থন দিতে অংশীজনদের কথা শুনতে এসেছি।