কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৩, ০১:১৮ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাড়ছে নদনদীর পানি, বিলীন দুই শতাধিক বাড়িঘর

উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে কুড়িগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবি : কালবেলা
উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে কুড়িগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবি : কালবেলা

উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নদনদীর পানি বেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নিম্নাঞ্চল। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, সুরমা, যমুনাসহ নদনদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। কোথাও বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই। পানি বাড়ার সঙ্গে বন্যার আশঙ্কার পাশাপাশি বেড়েছে নদীভাঙনের তীব্রতা। ভাঙনে বহু বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে দুই শতাধিক পরিবার। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও শত শত পরিবার। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। কালবেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত—

চিলমারী (কুড়িগ্রাম): ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পেয়ে দু-এক সপ্তাহের ব্যবধানে কুড়িগ্রামের চিলমারীর এক চরের আরও দুই শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে আরও তিন শতাধিক পরিবার। এরই মধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে প্রশাসন।

জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের একটি চরে উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরবড়ভিটা ও নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ার খাতা ও চিলমারী, থানাহাট ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার মানুষ রয়েছে। গত বছর থেকে এ চরে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত। এক বছর ধরে ভাঙনে পাঁচ শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে।

সরেজমিন ভাঙনকবলিত চরে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর তীব্র স্রোত চরটিতে সরাসরি আঘাত হানছে। এতে দ্রুত সময়ে ভেঙে যাচ্ছে চরটি। এ সময় দেখা গেছে অনেকেই সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের বাড়ির জিনিসপত্র। তবে এ সময় স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, চরটির সামনে থেকে বাল্কহেড দিয়ে নদ থেকে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যে হারে ভাঙন শুরু হয়েছে, এতে ২৫০ থেকে তিন শতাধিক পরিবার ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। ভাঙনের শিকার হয়ে অনেকেই এখন স্থান্তরিত হয়ে কাজল ডাঙার চরে আশ্রয় নিয়েছেন।

ইউএনও মো. মাহবুবুর রহমান বলছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকাটি পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আর ভাঙন রোধে যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় বিভিন্ন নদনদীর পানি আরও বেড়েছে। থেমে থেমে বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি বাড়া অব্যাহত আছে। গত বুধবার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ির তিস্তামুখ পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদের পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার এবং করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি বাড়া অব্যাহত আছে। তবে কোনো নদনদীর পানিই বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।

এদিকে পানি বাড়ার কারণে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি ও কুন্দেরপাড়া গ্রাম ভেঙে যাচ্ছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর খেয়াঘাটের কাছেও ভাঙন ধরেছে। ভাঙন রোধে ইউনিয়নের কিছু এলাকায় নদীর তীরে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো।

টাঙাইল: নদীভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর পালপাড়া গ্রাম। নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলায় উত্তর মির্জাপুরের একমাত্র যোগাযোগ রাস্তা কুরণী ফতেপুর সড়কের ফতেপুর বাজার সংলগ্ন প্রায় ৩০০ ফুট নদীতে চলে গেছে। এতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে এলাকার লোকজন হেঁটে ভাঙা অংশের পাশ দিয়ে চলাচল করছে। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী জানান, কয়েকদিন ধরে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ফতেপুর এলাকার ঝিনাই নদীর তীরবর্তী ফতেপুর পালপাড়া, এক টাকার বাজার, বানকাটা, থলপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ওই এলাকার পাঁচ থেকে ছয়টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাত হোসেনে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাজ করতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তবে ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রকৌশলী পাঠানো হয়েছে।

কুড়িগ্রাম : জেলার সবকটি নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। একদিকে বন্যা অন্যদিকে নদী ভাঙনের তীব্রতায় বেকায়দায় পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি জীবন-যাপন করছেন। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ৩ হাজার, মোগলবাসা ইউনিয়নে ২ হাজার, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ২ হাজার, নাগেশ্বরী উপজেলার বামডাঙা ইউনিয়নের ১ হাজার, ভুরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ১ হাজার ও চিলমারী উপজেলায় প্রায় ১ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে বলে জানা গেছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (আজ) দুদিন জেলার নদনদীতে পানি বৃদ্ধি হবে। এতে করে সাময়িক বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে বড় ধরনের কোনো বন্যা হবে না।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। এ ছাড়া জনগণের দুর্ভোগ কমাতে সব উপজেলার ইউএনও এবং ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জ : টানা ভারি বৃষ্টিপাত কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের দিকে কিছুটা বৃষ্টিপাত হলেও বিকেলে এক চিলতে রোদের দেখা মিলেছে। তবে বৃষ্টিপাত কমলেও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে বাড়ছে নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে।

সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একদিনের ব্যবধানে এখানে পানি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪ সেন্টিমিটার। জেলার অন্যান্য পয়েন্টে নদনদীর পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার জানান, বৃষ্টিপাত কম হলেও ওই সময়ে সুরমাসহ অন্যান্য নদনদীতে পানি বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মকসুদ চৌধুরী বলেন, জেলায় এখনো বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে আগাম পরিস্থিতি হিসেবে পর্যাপ্ত খাবার এবং উদ্ধার কাজে ব্যবহার উপযোগী জলযান প্রস্তুত রয়েছে।

লালমনিরহাট: তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চল ও তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের অন্তত ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট।

তীরবর্তী এলাকায় রাস্তা ডুবে যাওয়ায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বিপাকে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া গরু-ছাগল ও পোষাপ্রাণী নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ। পানি না কমলে খাবার ও স্যানিটেশন সমস্যায় পড়বে হাজারো মানুষ।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, পানি বৃদ্ধি পেলেও তা আবারও কমতে শুরু করেছে। খোঁজখবর রাখছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যে কারণে লিগস কাপের কোয়ার্টারে ছিলেন না মেসি

এইচএসসি পাসেই প্রাণ গ্রুপে চাকরি, পদ ৫০

সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল সেনাবহর

কৃষককে কুপিয়ে জখম, আটক ২

ঢাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস 

ওমরাহ পালনে ইচ্ছুকদের জন্য বিশেষ সেবা চালু

সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন, মরদেহ মিলল প্রতিবেশীর পরিত্যক্ত টয়লেটে

সুয়ারেজের দুই পেনাল্টিতে মেসিবিহীন মায়ামির রোমাঞ্চকর জয়

গাজায় নতুন ধাপে ‘গণহত্যা’ শুরু করল ইসরায়েলের সেনাবাহিনী

ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স  / ওষুধ-চিকিৎসকের সংকটে ভোগান্তিতে রোগীরা

১০

পাকিস্তানের হুমকির পর ‘অগ্নি ৫’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ভারত

১১

সরকারি সফরে চীন গেলেন সেনাপ্রধান 

১২

সাগরে ভাসমান ১৩ জেলে উদ্ধার, নিখোঁজ ৬

১৩

হবিগঞ্জে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনে ভয়াবহ আগুন

১৪

অ্যাপলের আগে সারপ্রাইজ ‍দিল গুগল

১৫

ভয়াবহ আগুনে তুলার মিল পুড়ে ছাই

১৬

২১ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৭

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১৮

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকার উল্টে নিহত ৩

১৯

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

২০
X