রাশিয়াসহ সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দেওয়া ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহের পর এ বাহিনী এবং এর প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। ক্রেমলিন এবং ওয়াগনারের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল তার পুরো বিবরণ এখনো প্রকাশ্যে আনা হয়নি।
চুক্তি অনুযায়ী প্রিগোজিনকে রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বেলারুশে গিয়ে তিনি কী করবেন এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো প্রিগোজিনের ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন তা নিয়ে বিশ্লেষকদের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদিও প্রিগোজিন বেলারুশে পৌঁছেছেন কি না সেটাও এখন পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত করতে পারছে না। এক কথায় তার অবস্থান এখন পর্যন্ত কেউ স্পষ্ট করতে পারছে না। তা ছাড়া বেলারুশে যদি প্রিগোজিনকে নির্বাসনে দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে তার বাহিনীর যোদ্ধাদের পরিণতি কী হবে, তা নিয়েও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
ওয়াগনার বস ইয়েভগিনি প্রিগোজিন রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাতের চেষ্টা করলেও তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের অভিযোগ অবশ্য তুলে নিয়েছে মস্কো। তবে ক্রেমলিন এবং ওয়াগনারের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল তার পুরো বিবরণ জানা যায়নি। প্রিগোজিন রাতের আঁধারে মিলিয়ে যাবেন বিশ্লেষকরা তাও মনে করছেন না। কারণ এই ভাড়াটে গ্রুপের নেতা দীর্ঘদিন পর্দার আড়ালে কাজ করছেন। আর তিনি আড়ালে কাজ করতেই বেশি পছন্দ করেন।
প্রিগোজিন ইউক্রেনের হাজার হাজার যোদ্ধার জন্য এমনকি প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি ক্রেমলিনের জন্য বছরের পর বছর বিতর্কিত কাজ করেন। বিশেষ করে সিরিয়ায় যুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০১৪ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ পর্যন্ত, যখন ক্রিমিয়া রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, যিনি পুতিনের মতো একনায়কের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন, তাকে কি আদৌ ক্ষমা করবেন এ কর্তৃত্ববাদী শাসক। কাজেই প্রিগোজিনকে নিরাপত্তার যে গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে তা শেষ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে কি না, তা নিয়েও ঘোর সন্দেহ রয়েছে। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে তার ভূমিকা কী হবে সেই উত্তর জানার এখনো বাকি রয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন করছেন যে, প্রিগোজিন যদি সত্যিই বেলারুশে যান সে ক্ষেত্রে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো প্রিগোজিনের ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হবেন। আর ওয়াগনার বাহিনী তাকে অনুসরণ করলে তারা রাশিয়া ও বেলারুশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে কি না, সেটাও একটা প্রশ্ন। এই সশস্ত্র বিদ্রোহের আগে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুতিনের যুদ্ধে কয়েক হাজার ওয়াগনার ভাড়াটে সেনা অংশ নিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন সেনাবাহিনী হিসেবে ওয়াগনারের সেই দিন যে মোটামুটি শেষ হয়ে আসছে তা নিয়ে বেশিরভাগ বিশ্লেষকই একমত।
প্রিগোজিন এখন দৃশ্যত নির্বাসনে যাচ্ছেন—এ অবস্থায় অনেকেরই প্রশ্ন যে, এখন তার যোদ্ধারা কী করবে। তাই এটা স্পষ্ট নয় যে, ওয়াগনার যোদ্ধারা আগের মতোই রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে সহায়তা করবে, নাকি তাদের মূল সেনাবাহিনীতে একীভূত করা হবে, নাকি ওয়াগনার বাহিনীকেই বিলুপ্ত করা হবে—এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে চুক্তি অনুযায়ী বিদ্রোহ সমাপ্ত করার পর প্রিগোজিনকে বেলারুশে যাওয়ার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো হদিস মিলছে না। তিনি বেলারুশ গেছেন নাকি অন্য কোথাও গেছেন, সে সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারছে না। রাশিয়ার সরকার সোমবার জানিয়েছে যে, প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ফৌজদারি মামলা সচল থাকবে এবং এ মামলার তদন্ত চলছে। এদিকে সোমবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু রুশ অধিকৃত ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলে নিজে দেশের সেনা সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন।
ওয়াগনারের বিদ্রোহের পর এই প্রথম তিনি নিজেকে প্রকাশ্যে আনলেন।
মন্তব্য করুন