আতাউর রহমান, ফরিদপুর থেকে
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:২৮ এএম
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফরিদপুর সদরে স্বতন্ত্রের শান্তির বার্তায় পাল্টাতে পারে ভোটের অঙ্ক

দুই প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি
ফরিদপুর সদরে স্বতন্ত্রের শান্তির বার্তায় পাল্টাতে পারে ভোটের অঙ্ক

ফরিদপুর সদরে নানা পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, গত কয়েক বছরের উন্নয়নে তারা তৃপ্ত। এই উন্নয়নের মধ্যেই তারা দেখেছেন, ক্ষমতাসীন দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে সহোদর বরকত-রুবেলের দাপট আর সমালোচনায় ভরা কর্মকাণ্ড। এবারের জাতীয় নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা চাচ্ছেন শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ফরিদপুর। ভীতিহীন শহরের চাহিদা এলাকার জনগণের।

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ফরিদপুর সদর (ফরিদপুর-৩) আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটারের মন জোগাতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এই আসনে এবার পাঁচ প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শামীম হক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের আব্দুল কাদের আজাদের (এ. কে. আজাদ) মধ্যে। শামীম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আজাদ উপদেষ্টা সদস্য।

দুদিন ধরে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই প্রার্থীর গণসংযোগ কার্যক্রমের সঙ্গে থেকে দেখা গেছে, অন্যান্য নির্বাচনী এলাকার মতো তারা রাস্তাঘাট বা এ ধরনের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন না। তারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন শান্তিপূর্ণ ফরিদপুরের। চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন প্রার্থীরা। এরই মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদ জেলার তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়ে লোকজনের মধ্যে সাড়া ফেলেছেন। দেশের অন্যতম শীর্ষ এই শিল্পপতি বলছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগেও তিনি তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফরিদপুরের শত শত মানুষের কাজের ব্যবস্থা করেছেন। কর্মী হিসেবে দক্ষ করে গড়ে তুলতে এরই মধ্যে গেরদা ইউনিয়নে প্রশিক্ষণ সেন্টার গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে এ ধরনের প্রশিক্ষণ সেন্টার গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঘোষিত ইশতেহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে।

তিনি আরও বলেছেন, নির্বাচনে এসে তার এসব উদ্যোগ বাধার মুখে পড়ছে। নৌকার প্রার্থী শামীমের সমর্থকরা এরই মধ্যে হামলা চালিয়ে গেরদা ইউনিয়নে ট্রেনিং সেন্টার ভেঙে দিয়েছে। সেখানে এক শিক্ষকের ওপর হামলা চালিয়েছে তার লোকজন। প্রতিদিনই শামীমের সমর্থকরা তার কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে এবং নির্বাচনী ক্যাম্প ভেঙে ফেলছে। এতকিছুর পরও তিনি শান্তির বার্তা দিচ্ছেন। ফরিদপুরের মানুষকে শান্তিতে রাখতে ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচনী কাজ করছেন।

ফরিদপুর সদরের বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদের কর্মসংস্থানের জন্য এলাকায় শিল্পকারখানা গড়ার প্রতিশ্রুতি তারা ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন। নির্বাচনের মাঠে প্রতিদিন যেভাবে ঈগল প্রতীকের কর্মীরা হামলার শিকার হচ্ছেন, তার বিপরীতে এই প্রতীকের প্রার্থী এসব মামলায় দায়ীদের বিচারের ভার ভোটারদের হাতেই তুলে দিচ্ছেন। নিজের কর্মীদের বিশৃঙ্খলায় না জড়িয়ে প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে চাচ্ছেন তিনি। তার এমন ভাবমূর্তি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন লোকজন।

অম্বিকাপুর এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মোজাম্মেল হক বলছিলেন, নানা কারণেই তারা শান্তি চান। একজন সজ্জন মানুষ হিসেবে এ. কে. আজাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

গতকাল বুধবার দুপুরে শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও শেখ রাসেল পৌর পার্ক এলাকায় কথা হয় গাড়ির যন্ত্রাংশের কয়েক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা বলছিলেন, নৌকার প্রার্থী বহু বছর দেশের বাইরে ছিলেন। নির্বাচনে তার সঙ্গে দলীয় লোকজন থাকলেও জনসম্পৃক্ততা কম। তা ছাড়া বিভিন্ন সময়ে দলীয় পদ ব্যবহার করে নানা কর্মকাণ্ড হয়েছে এখানে। এবারের ভোটে এসব বিষয়ও তারা মাথায় রাখছেন। ব্যবসায়ীরা সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত ফরিদপুর চান।

ফরিদপুরে নাগরিক সংগঠন নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বাবর বলেন, এখানকার মানুষ শান্তিপ্রিয়। উন্নয়নের সঙ্গে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চান তারা। ভোটের মাঠে কোনো ধরনের সংঘাত চায় না। যিনি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ আর প্রভাবমুক্ত ফরিদপুর দিতে পারবে, জনতা তাকেই ভোটের মাধ্যমে বেছে নেবে। সে ক্ষেত্রে ভোট দানের পরিবেশও থাকতে হবে।

ফলে বড় প্রভাবক হবে বিএনপির ভোট: বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়নি বরং ভোট ঠেকাতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ফরিদপুরে ভিন্ন চিত্র। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পদধারীরা চুপ থাকলেও দলটির সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা যদি ভোটকেন্দ্রে যান, তাহলে এই আসনে তা হবে নৌকা ও ঈগলের ফল নির্ধারণে অন্যতম ফ্যাক্টর। বৃহত্তরর ফরিদপুরের মধ্যে এই আসনে বরাবরই বিএনপির একটি ভোটব্যাংক রয়েছে।

সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন নৌকা প্রতীকে টানা তিনবারের এমপি হলেও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ধানের শীষের চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ৬২ হাজার ভোট পেয়ে অর্ধেক ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী ইমাম উদ্দিন আহম্মদকে হারিয়ে ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার খন্দকার মোশাররফকে ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষের এই প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন প্রায় সোয়া লাখ ভোট পেয়ে।

পুরোনো হিসাব দিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির সমর্থকরা যার সঙ্গে থাকবেন, জয়ের পাল্লা তার দিকেই যাবে।

জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য না মিললেও পৌরসভা বিএনপি ও ওয়ার্ড বিএনপির একাধিক পদধারী নেতা কালবেলাকে জানান, তারা ভোটকেন্দ্রে না গেলেও সমর্থকদের অনেকেই হয়তো যাবেন। সে আভাস মিলেছে দলটির তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেও। পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির পদধারী এক নেতা বলেন, পরিবেশ ভালো মনে হলে ভোট দিতে যাবেন। তবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে দেবেন না।

পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন: গতকাল আওয়ামী লীগের ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ. কে. আজাদ শহরের ঝিলটুলীর বাসভবনে এবং শামীম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেছেন, নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের হামলাসহ চিহ্নিত অস্ত্রধারী-সন্ত্রাসীদের নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছেন নৌকার প্রার্থী। ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে শামীম হকই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছেন। আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চান। শামীম বিএনপি-জামায়াতের মতো নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে চাচ্ছেন। এ পর্যন্ত যে ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছেন, তাতে তার প্রার্থিতা থাকা উচিত নয়। আজকে ফরিদপুরে একটা ভয়ার্ত পরিবেশ। শামীমের পক্ষে কাজ করছে এলাকার শীর্ষ চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।

ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য বিপুল ঘোষ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফারুক হোসেন, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টারসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

অন্যদিকে শামীম পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও মিথ্যা মামলা, নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী নিয়ে মাঠে নেমেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচন বানচাল করতে নানা ধরনের পাঁয়তারা করছে তারা। নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী চান আমি যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি। তাই আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ, পৌর মেয়র অমিতাভ বোসসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভদ্রতা দেখাব সর্বোচ্চ, আইনের প্রয়োগ হবে শতভাগ : এসপি সাতক্ষীরা 

ভাতিজার হাতে চাচা খুন, মামলা দায়ের

কুঁচিয়া বিক্রি করে সংসার চালান খোকন

আ.লীগ নেতার অন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরাল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির সুযোগ, আবেদন ফি ৩০০

বিশ্বসেরা কোচ, তবুও তারা কেন বেকার?

ইরানে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

ইরানের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা

অটোরিকশাচালকদের ওপর স্টিম রোলার চালাচ্ছে সরকার :  রিজভী 

২৫০০ অটোরিকশাচালকদের বিরুদ্ধে মামলা

১০

নবীনদের চাকরি দিচ্ছে ওয়ালটন

১১

দিনাজপুরে বোরো সংগ্রহের উদ্বোধন

১২

বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকচাপায় নিহত ২

১৩

শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটাল যুবলীগ নেতা

১৪

বুনো হাতির তাণ্ডবে নির্ঘুম রাত কাটছে গ্রামবাসীর

১৫

ব্যাটারিচালিত রিকশা চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী : ওবায়দুল কাদের

১৬

অসাধারণ ক্লপের আবেগঘন বিদায়

১৭

বিএনপির হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করতে হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১৮

প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিবে ঢাবি শিক্ষক সমিতি

১৯

চাকরি দেবে নোমান গ্রুপ, আবেদন করুন শুধু পুরুষরা

২০
X