সম্মেলনের পর সাত মাসের বেশি পেরিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। ফলে তাদের আবারও তাগাদা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের শাখাগুলোর সম্মেলন হলেও কমিটি দিতে গড়িমসি করায় বিরক্ত আওয়ামী লীগ।
এ ছাড়া যে সংগঠনগুলো অন্তর্কলহে জর্জরিত, সেগুলোয় তা মিটিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ ও যুব মহিলা
লীগের অন্তর্কলহ মেটাতে দলের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব প্রশমন করতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আলাদাভাবে তাদের সঙ্গে বসবেন। গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর এক যৌথ সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা এসব সিদ্ধান্ত দেন।
গত বছরের শেষাংশে একসঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকটি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন হয়। এর মধ্যে মহিলা লীগ ২৬ নভেম্বর, ছাত্রলীগ ৬ ডিসেম্বর ও যুব মহিলা লীগের সম্মেলন ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে তাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। অথচ সম্মেলনের পর সাত মাস অতিবাহিত হলেও সংগঠনগুলো এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারায় আবারও ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি চলতি মাসের মধ্যে করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যৌথ সভায়। এর আগে দলের একাধিক যৌথ সভায় সহযোগী সংগঠনগুলোকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার তাগিদ দেওয়া হলেও এবারই ‘শেষ’ বলে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন হয়। এরপর সাড়ে তিন বছরের বেশি সময়েও মহানগর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত শাখা কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করতে না পারায় একাধিকবার হতাশা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ শাখাকে দ্রুত কমিটি দিতে গতকাল ফের তাগিদ দেন তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান কালবেলাকে বলেন, সভায় কমিটি গঠন দ্রুত সম্পন্ন করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জিজ্ঞেস করেছেন। সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিষয়েও কথা হয়েছে।
অন্যদিকে, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ ও যুব মহিলা লীগের অন্তর্কলহ মেটাতে দলের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। শিগগির কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতিকে নিয়ে আলাদা বৈঠক করবেন ওবায়দুল কাদের।
জানা গেছে, গতকালের সভাতেও ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বাগবিতণ্ডায় জড়ান কৃষক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বিভিন্ন জেলা শাখার কমিটি দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়ে দুজন দুজনকে অভিযুক্ত করে বক্তব্য দেন। এমনকি কৃষক লীগের সভাপতি বক্তব্য দেওয়ার সময় পাশ থেকে ফোঁড়ন কাটেন স্মৃতি। এ সময় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা স্মৃতিকে থামার নির্দেশনা দিলেও তিনি তাদের কথা অগ্রাহ্য করেন। এর আগেও কৃষক লীগের এক নেতার মায়ের মৃত্যুর পর বারডেম হাসপাতালে মহানগরের এক নেতাকে নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন কৃষক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এ বিষয়েও গতকালের সভায় একে অন্যকে অভিযুক্ত করে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন কৃষক লীগের দুই শীর্ষ নেতা।
যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজি ও সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলির মধ্যকার দূরত্বের কারণে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও কমিটি গঠন স্থবির হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়েও সভায় কথা হয়। ডেইজির সাক্ষাৎ পান না কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তিনি দেশে না বিদেশে অবস্থান করছেন, তাও কেউ জানেন না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালবেলাকে বলেন, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনের পর দীর্ঘদিন হয়ে গেল, এখন কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার জরুরি। এ বিষয়ে তাদের আবারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের দ্বন্দ্ব শিগগিরই বসে সমাধান করা হবে।
মন্তব্য করুন