রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫১ এএম
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনএম-তৃণমূল বিএনপি বিএসপি মাঠে থাকতে চায়

লক্ষ্য ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন
বিএনএম-তৃণমূল বিএনপি বিএসপি মাঠে থাকতে চায়

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল নতুন নিবন্ধিত তিনটি রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। এই তিনটি দল থেকে ৩০১ জন প্রার্থী নির্বাচন করলেও কেউ বিজয়ী হতে পারেননি। এতে করে প্রার্থীরা হতাশ হলেও সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি তারা আস্থাশীল বলে জানা গেছে। এই তিনটি দলই হতাশা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। এজন্য তারা এখন থেকেই সংগঠন গোছানোয় মনোনিবেশ করেছে। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়েও তারা মাঠে থাকবে বলে দলটি তিনটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন। তাদের লক্ষ্য আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন।

ভোটের আগে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন ছিল, বিএনপি বর্জন করায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলটির নেতাদের বাগিয়ে এনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনএম, তৃণমূল বিএনপি ও বিএসপি ভোটে অংশ নেবে। গুঞ্জন সত্যি করে তিনটি দলই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে ছিল। এদের মধ্যে তৃণমূল বিএনপি এবং বিএনএম থেকে কমপক্ষে ১৫ জন সাবেক এমপি ভোটে ছিলেন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন বিএনপির। ভোটের আগে সরকারের সঙ্গে জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের প্রকাশ্য সমঝোতা হলেও ব্যতিক্রম ছিল এই তিন দল। ক্ষমতাসীন দল থেকে কোনো আসনে ‘প্রকাশ্য’ ছাড় না পেলেও দলগুলোর শীর্ষ নেতা বিশেষ করে বিএনপি থেকে আসা সাবেক এমপিদের বিজয়ী করানো হবে বলে আলোচনা ছিল। এর পেছনে যুক্তি ছিল, নির্বাচন বয়কট করলেও এর মধ্য দিয়ে সংসদে বিএনপির উপস্থিতির বিষয়টি দেখানো হবে। তবে সরকারের সঙ্গে আঁতাত-সমঝোতার সব গুঞ্জন নাকচ করা তিনটি দলেরই তখন দাবি ছিল, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের প্রত্যাশায় তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।

বিএনএমের দলীয় ‘নোঙ্গর’ প্রতীকে ৮৩ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে ২০ জন ‘হিডেন’ প্রার্থী ছিলেন, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচন করেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন সাবেক এমপি। আর ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন সাতজন সাবেক এমপি। বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক এমপি শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ফরিদপুর-১ এবং মহাসচিব ড. মো. শাহজাহান চাঁদপুর-৪ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে দুজনই হেরে যান। নির্বাচনের পরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে ভোটে নানা অনিয়ম এবং কারচুপির অভিযোগ আনে বিএনএম।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে দলটির মহাসচিব ড. মো. শাহজাহান কালবেলাকে বলেন, নির্বাচন ঘিরে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে অনেক লোক বিএনএমে যোগদান করেন। কিন্তু ভোটে কারচুপি হওয়ায় আমাদের প্রার্থীরা প্রত্যাশিত ফলাফল করতে পারেননি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কেউ কেউ হতাশ। তাই বলে বড় একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা তো ঘরে বসে থাকতে পারি না, কর্মসূচি থাকতেই হবে। আমরা এখন সারা দেশে সংগঠন গুছানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। দ্রুততম সময়ে দলের ঢাকা মহানগরসহ সব জেলা, উপজেলা এবং বিভাগীয় ও মহানগরে কমিটি গঠন করা হবে। অনেক জেলা ও মহানগরে থাকা আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। এরপর আন্দোলন বা দল হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকৌশল নির্ধারণ করব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের সময় যারা বিএনএমে যোগদান করেছেন তারা সবাই সন্তুষ্ট। তারা মনে করেন, দল হিসেবে বিএনএমের পারফরম্যান্স ভালো। এখানে নিট অ্যান্ড ক্লিন লোকজন আছে। সুতরাং যোগদান করা সবাই বিএনএমেই থাকবেন। সবাইকে একীভূত করে সংগঠনকে আরও গতিশীল, সুসংগঠিত করা হবে।

নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির দলীয় প্রতীক ‘সোনালী আঁশ’ নিয়ে ১৩৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে বিএনপির চারজন সাবেক এমপি ছিলেন। দলটির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ এবং মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করেন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দলের নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা সেলিমা হুদা। তবে তাদের কেউ-ই জয়ী হতে পারেননি।

তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার কালবেলাকে বলেন, আমরা হেরে গেছি, এটাই চূড়ান্ত সত্য। এখন যদি বলি অমুক কারণে হেরেছি, তমুক কারণে হেরেছি, মানুষ আমাদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিঁটা দেবে, মলম তো দেবে না। সব বিবেচনা করে দেখেছি, আমরা হয় আমাদের বুদ্ধির কাছে হেরে গেছি, না হয় সরল বিশ্বাসের কাছে হেরেছি অথবা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কাছে হেরে গেছি। তবে আমরা রাজনীতিটা করব, রাজনীতি করতে চাই।

তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, নির্বাচনের পর এখন সংগঠন গুছানো আমাদের প্রথম গুরুত্ব। তৃণমূল বিএনপিকে একেবারে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাব। এ লক্ষ্যে শিগগির দলের নির্বাচন করা সব প্রার্থীকে আমরা ডাকব। তারা আমাদের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল আছেন। তারাও বসতে চান। সবাই আমাদের সঙ্গে থাকতে চান।

ছয়টি দল নিয়ে ‘লিবারেল ইসলামিক জোট’ গঠন করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএসপি। ‘একতারা’ প্রতীকে নির্বাচনে এই জোটের প্রার্থী সংখ্যা ছিল ৮১। বিএসপির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী দলীয় একতারা প্রতীকে চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে ভোট করেন।

শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী কালবেলাকে বলেন, আমরা দু-তিন মাস আগে নিবন্ধন পেয়েছি। এই সময়ের মধ্যে যতটুকু সাংগঠনিক ভিত্তি ছিল তা নিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। আমাদের কোনো প্রার্থী বিজয়ী না হলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২৮টি দলের মধ্যে ভোট প্রাপ্তির দিক থেকে আমরা মোটামুটি তৃতীয় অবস্থানে আছি। যারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন তারা সবাই আছেন, থাকবেন।

তিনি বলেন, আমরা দেশ ও জনগণের জন্য রাজনীতি করি। সুতরাং আমাদের দলের কার্যক্রম চলতে থাকবে। সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে আমরা এগোব। সারা দেশে ৩০ জেলায় আমাদের সংগঠন আছে। অনেক জেলা-উপজেলায় কমিটি আছে। আমাদের লক্ষ্য ৬৪ জেলা, তথা সারা দেশে সংগঠনকে বিস্তৃত করা। দেশে সুস্থ ধারার রাজনীতির জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন বলে জানান বিএসপির চেয়ারম্যান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জেনে নিন আজকের নামাজের সময়সূচি

এলোপাতারি কুপিয়ে স্ত্রীকে হত্যা

ক্যাশমেমো নেই, খুচরা বাজারে দ্বিগুণ দাম কাঁচামালে

রামপুরায় ভবনের ৬ তলা থেকে পড়ে রডমিস্ত্রির মৃত্যু

কুড়িয়ে পাওয়া ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ফেরত দিলেন ভ্যানচালক

বুড়িগঙ্গা থেকে লাশ উদ্ধার / ৪ জনকেই হত্যা করা হয়েছে, ধারণা পুলিশের

ওসির বদলির খবরে মোহাম্মদপুর থানার সামনে মিষ্টি বিতরণ স্থানীয়দের

বিএনপি নেতা আব্দুস সালামের চিকিৎসার খোঁজ নিলেন ডা. কাঁকন 

সিপিএলে ইতিহাস গড়ে ফ্যালকনসকে জেতালেন সাকিব

নতুন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন / মাত্র ১০০ টাকায় করা যাবে দক্ষতা, চাকরি কিংবা ভর্তি প্রস্তুতির কোর্স

১০

সড়কের মাঝখানে গাছ রেখেই ঢালাই সম্পন্ন 

১১

বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

১২

টানা ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ জবির ভিসি

১৩

৬৪ জেলার নেতাকর্মীদের নতুন বার্তা দিল এনসিপি

১৪

ম্যানইউর জয়হীন ধারা অব্যাহত, এবার ফুলহামের মাঠে ড্র

১৫

ব্র্যাক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা-পেশাজীবীদের নিয়ে ‘আগামীর পথ’ অনুষ্ঠিত

১৬

প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের অনন্য কীর্তি

১৭

জুলাই যোদ্ধা শহীদ তানভীরের চাচা খুন

১৮

ভরা জোয়ারে ডুবে যায় বিদ্যালয়, শঙ্কায় অভিভাবক-শিক্ষার্থী

১৯

যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন তৌহিদ আফ্রিদি

২০
X