বইয়ের প্রতি বাঙালির ভালোবাসা অবিরাম। বইমেলা শুরু হলে পাঠক, লেখক-প্রকাশকদের মিলন উৎসবে পরিণত হয় বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। প্রতি বছরই মেলা কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসেন অগণিত লেখক, পাঠক-দর্শনার্থী। গতকাল শনিবার অমর একুশে বইমেলার লিটলম্যাগ চত্বরে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতে দেখা যায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আসা কবি ফিরোজ শাহ, মহেশখালী থেকে কবি নিলয় রফিক ও অনিন্দ্য জসিমকে। তাদের আড্ডার মুখ্য আলোচনা ছিল মেলা উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে আসা কবি ও লেখকদের ঢাকায় থাকার জায়গার সংকট নিয়ে।
কবি ফিরোজ শাহ বলেন, বাংলা একাডেমির উচিত ঢাকার বাইরে থেকে আসা লেখকদের জন্য অন্তত প্রতি বছর বইমেলায় রেস্ট হাউস বা মেসের ব্যবস্থা করা। কারণ, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার লেখকরা থাকার জায়গা না থাকার কারণে উচ্ছে থাকলেও বইমেলায় আসছেন না। অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাসায় থাকলেও সবার পক্ষে তা সম্ভব নয়। তাই ঢাকায় স্বল্পমূল্যে লেখকদের জন্য বিকল্প থাকার ব্যবস্থা যদি করা যেত, তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভালো মানের লেখক-প্রকাশক ও পাঠকরা এখানে আসতে পারতেন। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও বইমেলায় আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তবে লিটলম্যাগ বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই লিটলম্যাগ দেশের তরুণ সাহিত্যিকদের সাহিত্যচর্চার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এবারের বইমেলায় লিটলম্যাগ চত্বরে অসন্তোষ আছে। কারণ, আমাদের চত্বরটি এবার পেছনে পড়ে গেছে। কিন্তু এই চত্বরে আরও বেশি নান্দনিক ও মেলার মধ্যভাগে থাকার কথা। আমার প্রত্যাশা, আগামী বছর কীভাবে লিটলম্যাগ চত্বরকে নান্দনিকভাবে সাজানো যায়, সে বিষয়ে বাংলা একাডেমি ও লিটলম্যাগ সম্পাদকদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার ২৪তম দিন। এদিন বইমেলা লোকারণ্য, পাঠক, লেখক, প্রকাশকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। এদিন মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। গতকাল ছিল এবারের মেলার শেষ শিশুপ্রহর। এদিন মেলায় ছিল শিশুদের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিশুতোষ অনুষ্ঠান সিসিমপুর।
গতকাল মেলায় নতুন বই আসে ১৩৮টি। বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শনী মঞ্চের আয়োজন: এই মঞ্চে বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মুহম্মদ মোজাম্মেল হক রচিত মুক্তিযুদ্ধ ও আলোকচিত্র বই বিষয়ে লেখকের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: মোহাম্মদ রফিক ও স্মরণ: খালেক বিন জয়েনউদদীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে আলতাফ শাহনেওয়াজ ও সুজন বড়ুয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শামীম রেজা, শোয়াইব জিবরান ও আসলাম সানী। সভাপতিত্ব করেন আবুল মোমেন।