ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে চলছে জমজমাট প্রচার। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিশ্রামের ফুরসত নেই। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন তারা। বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনা নজরে পড়ার মতো। তারা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ছুটছেন, চষে বেড়াচ্ছেন বাসাবাড়ি, দোকানপাট, মার্কেট, কাঁচাবাজার। উন্নয়নের নানা অঙ্গীকার করছেন।
ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগ থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। বিরোধী দল থেকে একমাত্র প্রার্থী জাতীয় পার্টির। তবে নির্বাচনী প্রচারে এখনো নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে পারেননি জাতীয় পার্টির প্রার্থী শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল। স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক না রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীক নিয়েই সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
গণসংযোগ, উঠান বৈঠকসহ নানাভাবে ভোটারদের কাছে টানতে কাজ করছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। নির্বাচনী এলাকায় শোডাউন, লিফলেট বিতরণ চলছে। পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে অলিগলি। পাড়া-মহল্লায় স্থাপন করা হয়েছে নির্বাচনী প্রচার ক্যাম্প। সেখানে প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ভিড় লেগে থাকছে সারাক্ষণ।
মেয়র পদে ময়মনসিংহ সিটির সদ্য পদত্যাগ করা মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু (দেয়াল ঘড়ি), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম (ঘোড়া), শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কী টজু (হাতি), কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ড. রেজাউল হক (হরিণ) এবং জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল (লাঙ্গল) প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে আছেন।
ইকরামুল হক টিটু গতকাল শনিবার নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকার অনুভব কমিউনিটি সেন্টারে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সমাবেশ ও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালান। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন। ঘড়িকে উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে টিটু বলেন, ‘উন্নয়নের অসমাপ্ত কাজ করতে নগরবাসী আবারও এ প্রতীকে আস্থা রাখবে। =গত পাঁচ বছরে শতভাগ উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। সাধারণ মানুষ আমার প্রতি তাদের সমর্থন দিলে চলমান উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করতে পারব। সাধারণ জনতার পাশাপাশি নেতাকর্মীরাও আমার সঙ্গে রয়েছেন। আশা রাখছি, জয় সহজেই আসবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম নগরীর কাঁচিঝুলিসহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রচার চালিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘মানুষকে সুন্দর ও স্মার্ট শহর উপহার দিতেই প্রার্থী হয়েছি। প্রতীক হাতে পেয়েই মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি। আমার পক্ষে সাধারণ মানুষের বেশ সাড়া রয়েছে। কারণ গত সময়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি।’
শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কী টজু নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে গতকাল প্রচার চালিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নগরের মানুষ আকাশ দেখতে চায়, পরিচ্ছন্ন জায়গায় বসবাস করতে চায়, যানজট সমস্যার নিরসন চায়। তাই তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি প্রার্থী হয়েছি। পছন্দের প্রতীক হাতি পেয়েছি। মানুষ পরিবর্তনের লক্ষ্যে হাতি প্রতীকেই আস্থা রাখবে।’
এ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯০ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭১ পুরুষ, ১ লাখ ৭২ হাজার ৬১০ নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯ জন। তারা আগামী ৯ মার্চ ইভিএমে ১২৮ কেন্দ্রে ভোট দেবেন। মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন। নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিল নির্বাচিত হওয়ায় কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে ৩২ ওয়ার্ডে।