আগামীকাল সোমবার বরিশাল সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। গতকাল রাত ১২টায় নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়েছে। ভোট গ্রহণে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পুলিশ বলছে, নির্বাচনে মোট ১২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৬টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ ধরে সাজানো হচ্ছে নিরাপত্তা বলয়। অন্যদিকে, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এ নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১১৮ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৪২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৩০টি ওয়ার্ডের ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪ কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন।
১০৬ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ: গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টারে নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, সিটি নির্বাচনে ১২৬ কেন্দ্রের মধ্যে ১০৬টি কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। প্রার্থীদের অভিযোগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়।
ভোটের সময় নগরীতে বহিরাগতদের না থাকার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করা হবে। আমাদের মেসেজ খুব ক্লিয়ার। বরিশালে বহিরাগত থাকার সুযোগ নেই। এখানে যারা বহিরাগত আছেন, তারা রাত ১২টা পর্যন্ত থাকবেন। আগামীকাল (রোববার) থেকে নগরীতে কোনো বহিরাগত দেখতে চাই না।
পুলিশ কমিশনার জানান, ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যাব, এবিপিএন ও আনসার মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৪০০ সদস্য মোতায়েন থাকবেন।
১০ প্লাটুন বিজিবি: ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে নির্বাচনের আগের দিন থেকে পরের দিন পর্যন্ত ৩০ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। এ ছাড়া বিজিবির ১০টি দলের সঙ্গে ১০ জন নির্বাহী হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোথাও নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন বিচারকরা। ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বিজিবি সদস্যরা কাজ করবে।
দেড় হাজার সিসি ক্যামেরা: ক্যামেরা স্থাপন কমিটির আহ্বায়ক ও নেসারাবাদ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহিন শরীফ বলেন, গত বুধবার থেকে ১২৬ কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। শনিবারের (গতকাল) মধ্যে ক্যামেরা স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রোববার (আজ) ট্রায়াল দেওয়া হবে।
তিনি জানান, প্রতিটি ভোট কক্ষে একটি করে এবং প্রতিটি কেন্দ্রের প্রবেশ পথে দুটি করে ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এতে মোট ১ হাজার ১৪৬টি ক্যামেরা থাকবে।
মাঠে ৩০ ম্যাজিস্ট্রেট: জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে নির্বাচনের আগের দিন থেকে পরের দিন পর্যন্ত ৩০ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। এ ছাড়া বিজিবির ১০টি দলের সঙ্গে ১০ জন নির্বাহী হাকিম দায়িত্বপালন করবেন।
অপতৎপরতা দমনে র্যাবের হুঁশিয়ারি: সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে যে কোনো অপতৎপরতা কঠোরভাবে দমন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৮)। গতকাল দুপুরে নগরের রুপাতলীর র্যাব-৮ এর সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহামুদুল হাসান বলেন, শনিবার সকাল ৬টা থেকে র্যাব-৮ এর সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে মোট ১৬টি টিম থাকবে। এ ছাড়া শহরে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথসহ বিভিন্ন স্থানে র্যাবের চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা কাজ করছেন। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে।
মেয়র প্রার্থী রুপমের ইশতেহার: নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপম নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত বরিশাল মহানগরী গড়ে তোলাসহ ৩০ প্রতিশ্রুতি দিয়ে গতকাল শনিবার দুপুর ২টার দিকে ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। বরিশাল প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুপম বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে বরিশাল সিটি করপোরেশনকে মানবিক ও সবুজ নগরীতে রূপান্তর করা, নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা ও জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা, দুর্নীতিমুক্ত ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নগর গড়ে তোলা, নগরীর হাট বাজারের ইজারা, সিটি করপোরেশনের দরপত্র ও সম্পদ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করা, জনগণের ওপর বাড়তি পৌরকর আরোপ না করা, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও আধুনিকায়ন করা, নগরকে পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত রাখা হবে।
মন্তব্য করুন