ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৯১০ জন। বাকি ৮৪৫ জন ঢাকাতেই শনাক্ত হয়েছেন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে ১০ হাজার ৩০৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে মৃত্যু হয়েছে একজনের। কালবেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে এক দিনে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৬৬ জনের। এ ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মুক্তা আক্তার (২৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর এই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২১ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যে এ চিত্র দেখা গেছে। এর আগে বুধবার সর্বোচ্চ ১১৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্তের রেকর্ড হয়েছিল। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ ও নিয়ন্ত্রণ) ডা. মোহাম্মদ নুরুল হায়দার কালবেলাকে বলেন, এক দিনে ৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। চট্টগ্রামে এই পর্যন্ত এ বছর ১ হাজার ৭৪৯ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০৪ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বরিশাল ব্যুরো: বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে শুধু বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ৫৭ জন ভর্তি। বাকিরা জেলার অন্যান্য হাসপাতাল, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠির হাসপাতালে ভর্তি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল জেলার হাসপাতালগুলো ছাড়াও পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলায় ৩৩ জন, ভোলায় ১৫ জন, পিরোজপুরে ৩১, বরগুনায় ১৩ ও ঝালকাঠিতে ৯ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সব মিলিয়ে বুধবার পর্যন্ত বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ৫০৪ রোগী ভর্তি আছেন। গত ১ জানুয়ারি থেকে এসব হাসপাতালে ১ হাজার ৯১২ জন রোগী ভর্তি হন। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১ হাজার ৫২৫ জন এবং শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ দাস ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ময়মনসিংহ ব্যুরো: ময়মনসিংহে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সপ্তাহ ব্যবধানে আক্রান্ত হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী। বর্তমানে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন ৮০ জন, যাদের বেশিরভাগই ঢাকা, গাজীপুর, টঙ্গী থেকে এসেছেন। মমেক হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ফোকাল পারসন ডা. ফরহান হোসেন হিরা জানান, হাসপাতালটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ২৪ জন এবং ছুটি নিয়েছেন ২৩ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৮০ জনের মধ্যে পুরুষ ৬১, নারী ১৫ ও শিশু রয়েছে ৪ জন। চলতি মাসে চার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে এ হাসপাতালে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এইচ কে দেবনাথ জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরীতে নিয়মিত ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে। ২৭৫টি হটস্পটকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে নিবিড়ভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে এ কার্যক্রম। এ ছাড়া সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং এডিস মশার লার্ভা শনাক্তে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সিটির কোনো নাগরিক স্থানীয়ভাবে এডিস মশার সংক্রমণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হননি। রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীতেও উদ্বেগ ছড়াচ্ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ১৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ৩৩ রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত প্রায় দেড় মাসে রামেক হাসপাতালে ১১৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। এর মধ্যে কয়েকদিন আগে পাপ্পু রহমান (৪০) নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক রোগী আইসিইউতে মারা যান। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহম্মেদ বলেন, আমরা দেড় মাস আগে থেকেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৪ রোগী ভর্তি হয়েছেন। আগে থেকেই রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডটি ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত বেড রাখা আছে। সিলেট ব্যুরো : সিলেটেও ডেঙ্গু রোগী বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত এ রোগের ভয়াবহতা বাডছে। এখন পর্যন্ত সিলেটে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২১২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় আটজনসহ বিভাগে আরও ২০ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে আক্রান্ত ১৬ জন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, দুজন জৈন্তাপুর এবং একজন করে কানাইঘাট ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। গতকাল বৃহস্পতিবার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জনসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ২৮ জন ভর্তি ছিলেন। তাদের অনেকের স্বাস্থ্যগত উন্নতি হওয়ায় হাসপাতাল ছেড়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের ডা. জন্মজয় দত্ত জানান, সিলেট বিভাগে নতুন করে ২০ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলার আটজন ও অন্যান্য জেলার ১২ জন। উখিয়া (কক্সবাজার): কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলো ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে। প্রতিটি ঘরেই ধরা পড়ছে ডেঙ্গু রোগী। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত সোমবার পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় মোট ২ হাজার ৮৪১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। রোহিঙ্গা শিবিরের আশপাশের স্থানীয় বাংলাদেশিদের মধ্যেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১১৮ জন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সদর হাসপাতালে নতুন করে ১২ জন বাঙালি ও তিন রোহিঙ্গা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ পংকজ পাল জানান, জানুয়ারি থেকে গত সোমবার পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৬৭৬ জন। যেখানে রোহিঙ্গা ২ হাজার ৫২১ জন ও ১৫৫ জন স্থানীয় বাঙালি। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, সম্ভাব্য ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় কক্সবাজারে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ১০ জন চিকিৎসক নিয়ে টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে সদর হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো। ফেনী: ফেনীতে চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জেলায় এখন পর্যন্ত মোট ৯৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে চলতি মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩ জন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীর ছয় উপজেলায় ১২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে, যা জেলায় এক দিনে শনাক্তের হারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত সোমবার রেকর্ড ১৯ জনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন জানান, আক্রান্তদের মধ্যে ৬৪ জন এরই মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ১০ জন ও জেলার অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও ৯ জনসহ মোট ১৯ জন চিকিৎসাধীন। নীলফামারী: নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন ভর্তি হয়েছেন। গত এক মাস ১০ দিনে জেলায় ১৮ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৭ জন ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে নীলফামারীতে আসেন এবং একজন নীলফামারীতেই আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৩ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু-আল হাজ্জাজ বলেন, ১৮ জন রোগীর মধ্যে ১৭ জনেরই ভ্রমণ হিস্ট্রি আছে, তারা ঢাকা থেকে এসেছেন। কিন্তু কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের কোনো ভ্রমণ হিস্ট্রি পাওয়া যায়নি। চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। রাঙামাটি: রাঙামাটিতে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। ফলে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে পরিচালিত হচ্ছে অভিযান। অভিযানের ৫০ শতাংশ জায়গায় মিলছে এডিস মশার লার্ভা। সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। চলতি সপ্তাহে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১১জন। আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীর রয়েছে ভ্রমণ ইতিহাস। বিভিন্ন কাজে তারা গিয়েছিলেন ঢাকা-চট্টগ্রামে। আবার কেউ কেউ বাড়িতে থেকেও আক্রান্ত হয়েছেন। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শওকত আকবর জানিয়েছেন, বর্তমানে ১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর চাপ থাকায় এখনো আমরা ডেঙ্গু আক্রান্তদের আলাদা করতে পারিনি। যদি রোগী বাড়ে, সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। টঙ্গী (গাজীপুর): গত ২৪ ঘণ্টায় গাজীপুর সদর থেকে টঙ্গীতে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এই তথ্য জানা গেছে। টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনালের হাসপাতালের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে তিন শিশুসহ মোট ২২ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে এই হাসপাতালে মোট ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৫৩ জন। এদিকে, গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে এই হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩৬ জন।
মন্তব্য করুন