মাথার ভেতরের রক্ত চলাচলের তারতম্যের কারণে মাইগ্রেন দেখা দেয়। রক্ত চলাচল কমে গেলে রোগী হঠাৎ চোখে অন্ধকারও দেখে। পরে রক্ত চলাচল বেড়ে গেলে প্রচণ্ড ব্যথার অনুভূতি তৈরি হয়। আবার অনেক সময় চকলেট, পনির, বা চা-কফির মতো ক্যাফেইন জাতীয় খাবার, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ বা ব্যায়ামের কারণেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কমন মাইগ্রেন l মাথাব্যথা, বমি ভাব এই রোগের প্রধান লক্ষণ। l অতিরিক্ত হাই-তোলা, কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তবোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথা শুরুর আগেও হতে পারে। l মাথার যে কোনো অংশ থেকে এ ব্যথা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। চোখের ওপর হালকা চাপ দিলে আরামবোধ হয়। l মাথার দুই পাশে কানের ওপরে চাপ দিলে এবং মাথার চুল টানলে ভালো লাগে। l শব্দ ও আলো ভালো লাগে না। কখনো কখনো অতিরিক্ত শব্দ ও আলোতে মাথাব্যথা বেড়ে যায়। ক্ল্যাসিকাল মাইগ্রেন l এখানে চোখে দৃষ্টি সমস্যা যেমন চোখে উজ্জ্বল আলোর অনুভূতি, হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যাওয়া, দৃষ্টি সীমানা সরু হয়ে আসা অথবা যে কোনো একপাশ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে। ২০ মিনিট স্থায়ী এই উপসর্গের পর বমির ভাব এবং মাথাব্যথা শুরু হয়, যা সাধারণত একপাশে হয়। l দৃষ্টির সমস্যা এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হলে ধরে নিতে হবে এটি মাইগ্রেন নয়। ব্রেইন অথবা চোখে অন্য কোনো সমস্যার কারণে দৃষ্টির এ সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। মাথাব্যথাবিহীন শুধু দৃষ্টি সমস্যাও ক্ল্যাসিকাল মাইগ্রেনের লক্ষণ হতে পারে।
করণীয় l যাদের এ রোগ আছে, তাদের অন্তত দিনে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। l যেসব খাবারে মাইগ্রেন শুরু হতে পারে যেমন কফি, চকলেট, পনির, আইসক্রিম বা অ্যালকোহল বর্জন করা উচিত। l অধিক সময় উপবাস থাকা যাবে না। l নারীদের ক্ষেত্রে জন্মবিরতিকরণ পিল সেবন না করে প্রয়োজনে অন্য পদ্ধতি বেছে নেওয়া ভালো। l পরিশ্রম, মানসিক চাপ এবং দীর্ঘ ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে হবে। চিকিৎসা l বারবার মাইগ্রেনের আক্রমণ কমানোর জন্য পিজোটিফেন, অ্যামিট্রিপটাইলিন, বিটাব্লকার জাতীয় ওষুধ কার্যকর। l ব্যথা শুরু হলে প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ কার্যকর। তবে এসব ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ আরও বিপদ ডেকে আনতে পারে। l বমির ভাব কমানোর জন্য মেটোক্লোর প্রোমাইড, ডমপেরিডন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। l এসবে ব্যথা না কমলে সুমাট্রিপটান, আরগোটামাইন জাতীয় ওষুধে কোনো রোগী আরাম বোধ করেন। l তবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধমে অনেক ক্ষেত্রেই এ রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। l এও মনে রাখতে হবে, তীব্র মাথাব্যথা মানেই মাইগ্রেন নয়। দৃষ্টিস্বল্পতা, ব্রেন টিউমার এমনকি মাথায় রক্তক্ষরণের কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চোখের ডাক্তারের পাশাপাশি স্নায়ুরোগ বা অন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শও নিতে হবে। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, বিএসএমএমইউ দিন মহম্মদ আই হাসপাতাল, ধানমন্ডি এবং বাংলাদেশ আই হাসপাতাল, উত্তরা।
মন্তব্য করুন