চলছে বর্ষা মৌসুম। এ ঋতুতে কমবেশি সবাই মোকাবিলা করেন ঠান্ডা, জ্বর, পেটের সমস্যাসহ পানিবাহিত নানা ধরনের রোগের। তাই এ মৌসুমে সুস্থ থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্রয়োজন একটি সঠিক ডায়েট পরিকল্পনার, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। তবে শুধু বর্ষা নয়, প্রতি ঋতুতেই সঠিক ডায়েট পরিকল্পনা করা এবং তা মেনে চলা অনেক জরুরি। বর্ষার ডায়েট পরিকল্পনা কীভাবে করতে পারেন তাই জানাচ্ছেন বৃষ্টি শেখ খাদিজা
শুরুটা হোক সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে
সকালের শুরুটা হতে পারে এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানি দিয়ে। যাতে মেশাতে পারেন লেবুর রস/জিরা/কালো গোলমরিচ/দারুচিনি/পুদিনা বা তুলসী পাতা। এ ছাড়া পানির সঙ্গে মেশাতে পারেন মধুও। তবে মধু গরম করে বা গরম পানিতে কখনো মিশিয়ে খাবেন না।
নাশতার জন্য
দিনের অন্যান্য বেলার খাবারের থেকে সকালে ভারী নাশতা করা উচিত। সকালের নাশতায় রাখতে পারেন চিড়ার পোলাও। ঘি, পেঁয়াজ-মরিচ, বাদাম ও ভেজানো চিড়া দিয়ে মজাদার এ নাশতা স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় পেট ভরে রাখতেও সাহায্য করে। যদি চিড়ার পোলাও না খান, তাহলে মুগ ডালের চাপটি তৈরি করে সকালের নাশতায় রাখতে পারেন। এ ছাড়া যদি তেল এড়িয়ে চলতে চান তাহলে ওটস হতে পারে দারুণ একটি উপকরণ। ওটসের সঙ্গে দুধ ও বিভিন্ন ধরনের বীজ এবং ফল মিশিয়ে নাশতা সেরে নিন।
মিড-মিল স্ন্যাকস
সকাল সকাল নাশতার পাট চুকিয়ে নেওয়ার কারণে দুপুরের আগে অনেকেরই হালকা ক্ষুধা পায়। তাই ভারী কোনো খাবার না খেয়ে এ সময়ে রাখতে পারেন আধা কাপ ফল। যার মধ্যে থাকতে পারে আপেল/নাশপাতি/বেদানা বা অন্যান্য মৌসুমি ফল।
মধ্যাহ্নভোজ
চেষ্টা করুন দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যে দুপুরের খাবার শেষ করে ফেলতে। এ সময় মেন্যুতে রাখুন দুটি রুটি/লাউ, করলা, মিষ্টি কুমড়া, শসা, ঢ্যাঁড়শ
দিয়ে তৈরি সবজি। সয়াবিন নয়, রান্নায় ব্যবহার করুন সরিষার তেল বা অলিভ অয়েল। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য যোগ করতে পারেন লেবু/আমলকী/আম বা জলপাইয়ের আচারও। সঙ্গে রাখবেন এক বাটি ডাল। শেষপাতে নিন টক দই।
বিকেলের নাশতা
এক কাপ গ্রিন টির সঙ্গে একমুঠো ভেজানো বাদাম। এ ছাড়া খেতে পারেন খেজুর বা এনার্জি বার। তবে চিনি যেন না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখুন।
নৈশভোজ
গাজর, বিটরুট বা অন্যান্য সবজি দিয়ে তৈরি এক বাটি গরম সবজি। যদি সবজি খেতে ইচ্ছে না করে তাহলে চাল এবং মুগডাল দিয়ে বানিয়ে ফেলুন মজাদার খিচুড়ি। খিচুড়ি রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন এক চা চামচ ঘি। আর যদি চাল-ডাল বাদ দিতে চান তাহলে সবজি দিয়ে তৈরি পরোটা দিয়ে রাতের খাবার শেষ করতে পারেন।
বিছানায় যাওয়ার আগে করণীয়
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুমানো ভালো। তবে ঘুমের চাহিদা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং কিছু মানুষের জন্য সাত-নয় ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন হতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। তাই রাত নয়টার মধ্যে বিছানায় চলে যান। এর আগে হলুদ বা আদার গুঁড়া দিয়ে এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন।
যা করবেন
n একবেলার খাবার হজম হওয়ার পরই আরেকটি খাবার গ্রহণ করুন।
n গরম পানি দ্রুত হজমে সহায়তা করে। তবে আরও ভালো হয় যদি তাতে জিরা/আজওয়াইন/কালো গোলমরিচ মিশিয়ে খেতে পারেন।
n বাইরের প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। চেষ্টা করুন বাড়িতে তৈরি খাবার গ্রহণ করার।
যা করবেন না
বর্ষাকালে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। বিশেষ করে ভাজাভুজি, রাস্তার পাশের খাবার এবং কিছু ফল ও সবজি এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও মসলাযুক্ত খাবার, সেইসঙ্গে প্রক্রিয়াজাত খাবারও এ সময়ে এড়িয়ে চলা উচিত। এ ছাড়া মিষ্টি এবং ঠান্ডা পানীয় বর্জন করা উচিত।
ভাজাভুজি
বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে ভাজা খাবার হজম হতে সমস্যা হতে পারে। তাই চপ, পেঁয়াজু, পুরি, শিঙাড়া, আলুর চপ ইত্যাদি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
রাস্তার পাশের খাবার
রাস্তার পাশের খাবার সাধারণত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি হয় না। এ খাবার খেলে পেটের পীড়া বা অন্যান্য সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
কিছু ফল
তরমুজ, বাঙ্গি এবং কিছু ক্ষেত্রে আঙুর ও বেরির মতো ফল বর্ষাকালে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কারণ এ ফলগুলোতে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে, বিশেষ করে যদি সেগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হয়।
শাকসবজি
মাটি থেকে জন্মায় এমন কিছু সবজি, যেমন—মুলা, গাজর ও আলু বর্ষাকালে এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো মাটি থেকে পানি শোষণ করে, তাই বর্ষায় এদের মধ্যে রোগ-জীবাণু থাকার সম্ভবনা বেশি থাকে।
দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য
বর্ষাকালে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের গুণগত মান দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এগুলো সাবধানে ব্যবহার করা উচিত এবং বাসি বা গন্ধযুক্ত দুধ বা দই খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
অঙ্কুরিত ছোলা ও মুগ
বর্ষাকালে অঙ্কুরিত ছোলা ও মুগ ডালে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর ঝুঁকি থাকে, যা পেটের সমস্যার কারণ হতে পারে।
মাশরুম
বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে মাশরুমেও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। তাই মাশরুম এড়িয়ে চলাই ভালো।
মিষ্টি ও ঠান্ডা পানীয়
অতিরিক্ত মিষ্টি বা ঠান্ডা পানীয় হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই বর্ষাকালে এগুলোর পরিমাণ সীমিত রাখাই ভালো।
প্রক্রিয়াজাত মাংস
সসেজ, সালামি, হটডগ ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত মাংস শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।
তেলযুক্ত খাবার
যে কোনো সময়েই তৈলাক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তবে বর্ষাকালে হজমের সমস্যা বেশি হয় বলে তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
সামুদ্রিক মাছ
বর্ষাকালে সামুদ্রিক মাছ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাই এ সময় সামুদ্রিক মাছ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার
অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই বর্ষাকালে মসলার পরিমাণ কম ব্যবহার করাই ভালো।
মন্তব্য করুন