ইসলাম শান্তি ও সৌন্দর্যের ধর্ম। সুন্দর কথা বলা, সুন্দরভাবে বলা কোরআনের নির্দেশনা। এর মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র সব পর্যায়ে মানুষের মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় থাকে। কোনো বিষয়ে কথা বলতে হলে ইনসাফের সঙ্গে সুন্দরভাবে বলতে হবে। কাউকে ঘায়েল করে বা আক্রমণাত্মকভাবে কথা বলা অনুচিত। সৎকাজের আদেশ অসৎকাজ থেকে নিষেধ করার ক্ষেত্রে যে কোনো প্রকার জুলুম করা, আক্রমণাত্মকভাবে ঘায়েল করা, কাউকে গালমন্দ করা বা তিলকে তাল বানিয়ে প্রকাশ করা গুনাহের কাজ। সর্বদা নসিহতের নিয়তে কল্যাণকামী হয়ে সুন্দরভাবে সুন্দর কথা হবে। এর মাধ্যমেই সমাজের সংশোধন হবে।
ইনসাফের সঙ্গে সুন্দর কথা সুন্দরভাবে বলার কারণে স্বার্থপর মানুষ যদি কষ্ট পায় তাহলে আমার গুনাহ হবে না। কিন্তু আমার উপস্থাপনের অসৌন্দর্য বা কথায় মাধুর্যতা ও মার্জিত ভাব না থাকার কারণে যদি কেউ কষ্ট পায় তাহলে এতে গুনাহ হবে। অসুন্দর কথার কারণে দূরত্ব তৈরি হয়, বিভেদ তৈরি হয়; যা অনেক সময় হাতাহাতি বা মারামারির দিকেও নিয়ে যায়। এটি কখনো মুসলমানের কাজ হতে পারে না।
উম্মাহর মধ্যে মতবিরোধপূর্ণ ক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। কেউ যদি বিদআতের পথে চলতে চলতে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, তাকেও হকের পথে দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে আচরণ-উচ্চারণ মার্জিত হতে হবে। তাকে বোঝানোর জন্য দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে; কিন্তু তাকে কষ্ট দিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। আর যাদের গোমরাহী এতটা কঠিন নয়, যা আহলে সুন্নাহ আল জামাত থেকে তাদের বের করে দেয় না, (যেমনটা বিভিন্ন মুসলিম দল-উপদলের মধ্যে হয়ে থাকে), তাদের আহলে সুন্নাহল জামাতের পথে আহ্বানের ক্ষেত্রে আরও বেশি মার্জিত আচরণ করতে হবে। এ বিষয়টির জন্য কোরআনের দুটি আয়াত খুব ভালোভাবে মনে রাখতে হবে—প্রথমটি হচ্ছে, ১৫ পারার ১৭ নম্বর সুরা বনি ইসরাইলের ৫৩ নম্বর আয়াত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী আপনি আমার বান্দাদের বলে দিন, তারা যেন সুন্দর কথা বলে, সুন্দরভাবে বলে। কারণ তাদের মধ্যে বিভেদ এবং বিভেদ তৈরি করে দেয়। কারণ শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।’ দ্বিতীয় আয়াত হচ্ছে, সুরা আহজাবের শেষে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং ভালো কথা বলো। আমাদের ঘরে-বাইরে সব জায়গার জন্য নির্দেশনা পালন করা অপরিহার্য।’
আরেকটি বিষয়, আমরা পবিত্র রজব মাসে উপনীত হয়েছি। এটা অনেক ফজিলতপূর্ণ মাস। রজব আরবি শব্দ, যার অর্থ সম্মানিত। এই মাসকে আল্লাহতায়ালা বিশেষ চারটি সম্মানিত মাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ সম্মানিত মাসগুলোতে আল্লাহ জুলুম এবং অন্যায় করতে নিষেধ করেছেন। জুলুম এবং অন্যায় তো সর্বাবস্থায় নিষেধ, তবুও এ সম্মানিত মাসে এর শাস্তি আরও বেড়ে যাবে। তাই সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।
সাহাবায়ে কেরাম রজব মাস এলেই রমজানের জন্য দোয়া করতেন এবং রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। সম্মানিত চার মাসের মধ্যে রমজানের নাম নেই, কারণ এটি এমনি সম্মানিত। অনেকের রমজানের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান, এ ক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলো, রমজানের আলাদা কোনো প্রস্তুতি নেই। একজন মুমিন পুরো বছর যদি ইমানি জীবনযাপন করে, তাহলে সেটাই তার জন্য রমজানের প্রস্তুতি। মুমিনের সবসময় জীবন গুনাহমুক্ত হবে। গুনাহ থেকে মুক্ত অবস্থায় রমজানকে প্রবেশ করতে হবে। এটাই রমজানের ইস্তেকবাল এবং প্রস্তুতি। পানাহার, পোশাক, লেনদেন সবকিছু হালাল হওয়া রমজানের প্রস্তুতির অংশ। অনেকে হারাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করেও পারে না, তাদের জন্য আল্লাহর নির্দেশনা হলো, ‘কেউ যদি আল্লাহর ভয়ে চেষ্টা করে আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন এবং এবং তাকে অভাবনীয় স্থান থেকে রিজিক দান করবেন।’ মুমিন হিসেবে তার দায়িত্ব হলো হালালের পথে চলার জন্য চেষ্টা করা।
অনুলিখন: লুতফে রাব্বী আফনান
মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মালেক
খতিব: বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
৩ জানুয়ারি, ২০২৫