ভরদুপুরে হিমুসমগ্র কিংবা রাতে ফেলুদার টান টান উত্তেজনায় ব্যস্ত থাকা। সময় যে কখন পার হয়ে যায় টেরই পাওয়া যায় না। বই এমনই সঙ্গ দেয় সব বয়সী মানুষকে। তবে বই বললেই এখন আর হার্ড কভার- পেপার কভার বা কাগজ ভেসে ওঠে না। বরং হাতে থাকা স্মার্টফোনে রাখা যাচ্ছে শতাধিক বই। ব্যাগ বা বুকসেলফের দরকার নেই। হাতে স্মার্টফোনটা থাকলেই হলো। ই-বুক বা বইয়ের অনলাইন সংস্করণ বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে এখন। স্মার্টফোনের কারণে বই আরও সহজলভ্য হচ্ছে বলে মনে করেন ভিভোর কান্ট্রি ব্র্যান্ড ম্যানেজার তানজীব আহমেদ। বইয়ের অনলাইন সংস্করণ নিয়ে কথা বলেছেন গ্লোবাল স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিভোর এই কর্মকর্তা।
নতুন বইয়ের টানে শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও তানজীব আহমেদ ছুটে যান অমর একুশে বইমেলায়। বই কেনাটা নেশা হলেও সময়স্বল্পতায় পড়া হয় না অনেক বই। পছন্দের বিষয় অ্যাডভেঞ্চার। তবে মনটা চাঙ্গা রাখতে হাতের আশপাশেই থাকে ছন্দের জাদুকর সুকুমার রায়ের বই। কালজয়ী সাহিত্যর পাশাপাশি বর্তমান লেখকদের লেখাও পছন্দ তার। এত এত বই বহন করার চেয়ে স্মার্টফোনেই পড়তে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। বিশেষ করে দেশি-বিদেশি বড় বড় জার্নাল কিংবা পত্র-পত্রিকাগুলো অনেকক্ষেত্রেই সহজলভ্য নয়। তাই স্মার্টফোনই ভরসা।
মুদ্রিত বই পড়া আর স্মার্টফোনে বই অনলাইন সংস্করণ পড়া কি এক? এমন প্রশ্নের উত্তরে তানজীব একটু হেসে বলেন, ‘দেখুন মুদ্রিত বই পড়ার অনুভূতি অন্যরকম। সবার মতো আমিও ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ের মধ্যে লুকিয়ে গল্পের বই পড়েছি। গল্পের চরিত্রগুলোর সঙ্গে তেপান্তরের মাঠ পেরিয়েছি। সেই অনুভূতির কোনো তুলনা হয় না। কিন্তু পছন্দের লেখকের বই হাতে পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘসময়। এখন স্মার্টফোনের সব সুবিধা সেই প্রিয় লেখকের বইটি ডিজিটালভাবে হাতের নাগালে নিয়ে এলে সেটা মন্দ কী!’
তানজীব আরও বলেন, ‘বরং স্মার্টফোনে বই পড়াটা তো আরও সহজ। যখন তখন যেখানে খুশি পড়া যায়। স্মার্টফোনটির স্ক্রিন ভালো রেজুলেশনের পাশাপাশি মাল্টিটাচ ক্যাপাসিটিভ হলে স্ক্রল করে পড়তে সুবিধা হয়। পিক্সেল ডেনসিটি এবং ব্রাইটনেস কোয়ালিটি ভালো হলে সানলাইটে কোনো ঝামেলা ছাড়াই লেখা ও ছবি স্পষ্ট দেখা যায়। এমনকি লেখার ফন্ট ছোট বড় করে প্রয়োজন অনুযায়ী ঠিক করার ব্যবস্থা থাকে স্মার্টফোনে। পাশাপাশি এখন ভিভোর স্মার্টফোনে চোখের যত্নে বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা।’
অডিও বুক বিষয়টা বেশ জনপ্রিয় এখন। বই শোনার এই চমৎকার ব্যবস্থায় ভয়েজের সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজকের দারুণ সমন্বয় থাকে। এতে শুনতে শুনতেই ফিল করা যায় রোমাঞ্চকর অনুভূতি!
তবে কি স্মার্টফোন মুদ্রিত বইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী? এই বিষয়ে তানজীব আহমেদকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘স্মার্টফোন মুদ্রিত বইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং সহযোগী। কারণ স্মার্টফোন পাঠক তৈরি করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে প্রিয় লেখকের বই কবে- কখন- কোন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হবে তা আগেই জানা যায়। এতে সঠিক সময়ে গিয়ে প্রিয় লেখকের বইটি কেনার পাশাপাশি অটোগ্রাফ এবং ফটোগ্রাফ দুটোই সংগ্রহ করতে পারে বইপ্রেমীরা। পাশাপাশি স্মার্টফোনের কল্যাণে নতুন লেখকদের পাঠক তৈরি হচ্ছে।
স্মার্টফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে উঠেছে লেখক পাঠকের আলাদা কিছু কমিউনিটি গ্রুপ।এই গ্রুপগুলোতে বই নিয়ে হয় গঠনমূলক আলোচনা। পাশাপাশি কেউ কোন বই পড়লে সঙ্গে সঙ্গে সেটার রিভিউ দিতে পারছে তার ব্যক্তিগত আইডি এবং এই গ্রুপগুলোতে। স্মার্টফোনে বুক ফটোগ্রাফির মাধ্যমে বইয়ের সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে ছড়িয়ে দিচ্ছে বইয়ের কথা। যার ফলে লেখক পাঠকের দূরত্ব ক্রমেই কমে আসছে এবং বাড়ছে তাদের মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং।
তানজীব আহমেদ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন করে আধুনিক প্রযুক্তিটাকে রপ্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ডিজিটাল বই প্রকাশের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। পুরো বিশ্বের কাছে পৌঁছাতে হলে স্মার্ট টেক প্রযুক্তির বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে স্মার্টফোন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
মন্তব্য করুন