কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫, ০৬:৫৫ পিএম
আপডেট : ২৯ জুন ২০২৫, ০৮:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স, এক বছরে এলো ৩০ বিলিয়ন ডলার

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স নতুন এক ইতিহাস গড়েছে। অর্থবছর শেষ হতে এখনো দুদিন বাকি থাকলেও ইতোমধ্যে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে হিসাব করা হয়েছে)। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে দেশের ইতিহাসে কোনো এক অর্থবছরে এত বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।

এর আগে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, যখন বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছিলেন ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। তবে চলতি অর্থবছরের রেমিট্যান্স সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে। রোববার (২৯ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম ২৮ দিনেই প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৫৪ কোটি বা ২.৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি টাকায় দাঁড়ায় প্রায় ৩১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। মাসের শেষ দিনগুলোতেও যদি একই গতিতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ অব্যাহত থাকে, তাহলে জুন মাস শেষে রেমিট্যান্স ২৭০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রেমিট্যান্সপ্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ, প্রবাসীদের জন্য বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া, প্রণোদনা বৃদ্ধি, এবং ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার উন্নয়ন। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এসব রেমিট্যান্স বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমেই এসেছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য স্বস্তি এনে দিয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই মাসে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। নতুন বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে এসেছে ২১৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি, মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি এবং মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মার্চ মাসে একক মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি কালবেলাকে বলেন, ‘রেমিট্যান্সপ্রবাহে বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব সাফল্য শুধু পরিসংখ্যানগত এক অর্জন নয়, বরং এটি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া রেমিট্যান্সপ্রবাহ প্রমাণ করে, সঠিক নীতি প্রয়োগ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার কার্যকর সংস্কার কিভাবে বৈধ পথে অর্থপ্রবাহ বাড়াতে পারে। সরকারি প্রণোদনা, হুন্ডি প্রতিরোধে আইনগত ও প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ, প্রবাসীদের জন্য সহজতর ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা—এই ৩টি উপাদান একত্রে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের রেমিট্যান্সবান্ধব নীতিমালা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারিও এই সাফল্যের অন্যতম কারণ।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে এই বিপুল রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি দিয়েছে, ডলারের বাজারে চাপ হ্রাস করেছে এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই ধারা ধরে রাখতে হলে প্রবাসী শ্রমবাজার আরও বহুমুখীকরণ, অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, এবং প্রবাসীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। রেমিট্যান্স কেবল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উপায় নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার একটি কৌশলগত হাতিয়ার—এই উপলব্ধি থেকেই রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যমতে, জুলাই থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩ হাজার ৫ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৭৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ, চলতি বছর প্রবাসী আয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ।

এই সাফল্যের পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারের সচেতন নীতিমালা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতা রয়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। তারা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে এবং সামষ্টিক অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষত, আমদানি ব্যয় মেটানো, ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা এবং বৈদেশিক দেনা পরিশোধে এই রেমিট্যান্স বড় ভূমিকা রাখছে।

সব মিলিয়ে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। এই ধারা বজায় রাখতে হলে প্রবাসীদের আস্থার জায়গা আরও দৃঢ় করতে হবে এবং হুন্ডি বন্ধে চলমান পদক্ষেপগুলোকে আরও জোরদার করতে হবে। তবেই দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান আরও সুদৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জামিন নিতে এসে আদালত থেকে পালালেন আ.লীগ নেতা

আগামী রমজানের আগেই হবে নির্বাচন : রুমিন ফারহানা

সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে পচা চাল বিতরণের অভিযোগ

পঞ্চগড়ে ট্রেনে বালু পরিবহনে খুলছে সম্ভাবনার নতুন দ্বার

ইরানে স্টারলিংক ব্যবহারে হতে পারে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী রাকিব বাঁচতে চান

হাতিয়ার মেঘনায় ফিটনেসবিহীন স্পিডবোটে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা

বিএনপির কাউন্সিলে ভোট কারচুপির অভিযোগ, পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসে মিলল সিলযুক্ত ব্যালট

যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে

ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ৬০ সদস্য গ্রেপ্তার

১০

খিলক্ষেতে স্থায়ী মন্দির নির্মাণের আশ্বাস তারেক রহমানের

১১

এইচএসসি পরীক্ষা দিতে এসে নিখোঁজ মাহিরা

১২

বার্সেলোনার কাছ থেকে ৫৬০ কোটি টাকা পেলেন মেসি

১৩

জাবিতে ৩২৩ কোটি টাকার বাজেট পাস

১৪

সড়কের পাশে পড়ে ছিল পলিথিন মোড়ানো হাত-পা বাঁধা নারী

১৫

বিএনপি-জামায়াতের ওপর নির্যাতনের সময় ‘ওই দলটি’ বাহবা দিয়েছে : মির্জা আব্বাস

১৬

নির্বাচন নিয়ে কিছু দল জাতিকে বিভ্রান্ত করছে : ডিএল

১৭

সন্তান জন্মের পর হাসপাতালেই এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন ইশা

১৮

আস-সুন্নাহ’র মোধাবী প্রকল্পে জবির ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আবেদন শুরু

১৯

ইরানের সেই টিভি উপস্থাপিকা পেলেন আন্তর্জাতিক পুরস্কার

২০
X