রাজধানী ঢাকায় সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন, ইন্টারনেটসহ ২৬টি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাজউক একটি ভবন নির্মাণে অনুমতির পর বিদ্যুৎ, গ্যাস, সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসাসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম থাকে। অথচ কোনো সংস্থাই ভবনের নকশা যাচাই করে না। ভবন মালিক চাওয়া মাত্রই সব সেবা দিয়ে দেয়। সেখানেই ঘটে বিপত্তি! নকশায় নেই অথচ হোটেল রেস্টুরেন্ট হয়ে যায়। ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। নগর সেবা সংস্থাগুলোকে এক ছাতার নিচে আনা গেলে এসব দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি অনেকটাই সম্ভব।
মঙ্গলবার (৬ মে) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে রাজউক ও জাইকার যৌথ আয়োজনে ‘ভবনসংক্রান্ত দুর্যোগের (ভূমিকম্প ও অগ্নি) ঝুঁকি প্রশমনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি’ বিষয়ে সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন জাইকার প্রতিনিধি কবুতা ও রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) হারুন-অর-রশীদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. রাকিব আহসান।
আদিলুর রহমান খান বলেন, প্রতিটি ভবন হতে হবে নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব এবং দুর্যোগসহনশীল। রাজউককে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। ভবনের নির্মাণ পর্যায়ে তদারকি ও গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য দক্ষ ও আধুনিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যার অভাবে অগ্নিকাণ্ড ও বিপর্যয় ঘটে। এজন্য ভবনের মালিক, প্রকৌশলী, স্থপতি ও ঠিকাদার সকলের সচেতন হতে হবে।
মো. নজরুল ইসলাম বলেন, স্টেকহোল্ডাররা আইন না মানলে, কঠিন আইন করলেও নিরাপদ নগর নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। আমাদের সমাজে আইন না মানার সংস্কৃতি রয়েছে। প্রভাবশালীদের মাঝে এ প্রবণতার হার বেশি। আইন না মানার প্রবণতার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে রাজউক কর্মকর্তারা অসহায়। অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রাজউকসহ সংশ্লিষ্টদের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। আইন না মানলে নিরাপদ রাজধানী গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, নকশাবহির্ভূত ভবনে রাজউকের অভিযান চলমান আছে। এসব অভিযানকে সাধারণ জনগণ স্বাগত জানাচ্ছে ও তাদের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। ৩ হাজার ৩৮২টি ভবন চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, একটা ভুল ধারণা আছে যে ড্যাপ পরিবর্তন না করার কারণে নির্মাণকাজ থেমে আছে, বাস্তবে তা নয়। আমরা রাজউক থেকে প্রতিনিয়ত নিয়ম মেনে নির্মাণ অনুমোদন দিচ্ছি। নকশা অনুযায়ী সরেজমিনে যতটুকু রাস্তা আছে তা মেনেই আমরা নির্মাণ অনুমোদন দিব; এর বাহিরে না। সামান্য লাভের আশায় আইন ভেঙে ভবন নির্মাণ করলে পরিশেষে আপনাদেরকেই তার ফল ভোগ করতে হবে। কেননা রাস্তার জায়গা ছেড়ে বাড়ি না করলে ফায়ার সার্ভিস ঢুকতে পারবে না। বড় দুর্ঘটনার শিকার হতে হবে সাধারণ মানুষকে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করছি।
রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ঢাকাকে এক আমব্রেলার নিচে না আনলে যত পরিকল্পনাই করা হোক না কেন কাজে আসবে না। সকল কাজের সিদ্ধান্ত একটি জায়গা থেকে আসতে হবে। সেখানে নগর সরকার হোক কিংবা এক মেয়রের কাছে ক্ষমতা থাকুক সেটায় সমস্যা নেই। নগরের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, সেবাসহ সকল সেবার বিষয়ে একটি জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) হারুন-অর-রশীদ বলেন, গত কয়েক বছরে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে যাতে হতাহতের সংখ্যা অনেক। এর ঝুঁকি কমাতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাসস্থান রেখে যেতে আমাদের আইন মেনে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করতে হবে। রাজউক থেকে ভূমিকম্প ও ঝুঁকি প্রশমনে সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আরও ৬০০ জনকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য করুন