রাজধানীতে সাইকেল র্যালি থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি জানানো হয়েছে। র্যালি-পূর্ব সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, সিগারেট কম্পানিগুলো যুবকদের ধূমপানে আকৃষ্ট করতে রেস্টুরেন্টে ধূমপানের স্থান তৈরি, বিক্রয়স্থলে বিজ্ঞাপন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনসহ, নিষিদ্ধ ই-সিগারেট প্রসারে নানা কার্যক্রম করছে। বহুজাতিক তামাক কম্পানিগুলো ভোক্তা ও মুনাফা বাড়াতে রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ করে কিশোর-তরুণদের ধূমপানের নেশায় আসক্ত করার কুটকৌশল প্রতিরোধে আইন শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) আয়োজিত ‘ইয়ুথ ফর হেলথ : টাইম টু স্ট্রেনথদেন টোব্যাকো কন্ট্রোল ল’ শীর্ষক সাইকেল র্যালি-পূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী।
এ সময় বক্তৃতা করেন আইনজীবী ও নীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম সুজন, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান, মোহম্মাদপুর সাইকেলিস্টের সদস্য ফয়সাল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাইকেলিস্ট গ্রুপের সদস্য প্রসেনজিত বিশ্বাস, মানসের প্রকল্প সমন্বয়কারী উম্মে জান্নাত ও সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার মো. আবু রায়হান।
সমাবেশে অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, কিশোর-তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তি বাড়ছে, যার শুরুটা হয় ধূমপান দিয়ে। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে তরুণদের সচেতন করতে, সুরক্ষিত রাখতে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কিন্তু সব প্রচেষ্টায় বাধা আসছে। তাই এখন আর তামাক কম্পানিগুলোকে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। কারণ, তারা আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, সরকার অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আন্ত মন্ত্রণালয় সমন্বয় সাধনে কাজ করছে, যা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু অসংক্রামক রোগের প্রধান কারণ তামাক। তাই তামাক কোম্পানিগুলোকে মানুষের রোগ, ভোগান্তি, মৃত্যু ও রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতির জন্য শাস্তি ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, আমাদের তরুণদের মধ্যে তামাকের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সব স্তরে এ বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। আইনটি শক্তিশালী করার পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বর্তমানে চিকিৎসা ব্যয়ের প্রায় ৭১ শতাংশ খরচ বহন করতে হয় নাগরিকদের। বাংলাদেশে প্রায় ৭০ শতাংশ অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক ব্যবহার। এ জন্য সচেতনতা ও শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তার কার্যকর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিদ্যমান ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো নানাভাবে এর বিরোধিতা করছে।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর দেশে তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে এবং তামাক দিয়ে নেশার জগতে ঝরছে তরুণ সম্ভাবনা। মৃত্যুর মিছিল রুখতে ও তরুণদের জন্য আগামীর স্বাস্থ্যকর বাংলাদেশ গড়তে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই।
মন্তব্য করুন