চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে অংশ নেওয়া আরও ৩টি প্যানেল নিজেদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। তিন প্যানেলের ঘোষিত ইশতেহারে নিরাপদ ও সহিংসতামুক্ত ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন, মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহনব্যবস্থা উন্নয়ন, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বর ও চাকসু ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত পৃথক তিন সংবাদ সম্মেলনে ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’, ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ ও ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল তাদের ইশতেহার তুলে ধরে।
সচেতন শিক্ষার্থী সংসদের ১২ বিভাগের ইশতেহার : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল ১২টি বিভাগে মোট ৯১টি উপদফা সংবলিত ইশতেহার ঘোষণা করেছে। বিকেল ৪টার দিকে বুদ্ধিজীবী চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার ঘোষণা করেন প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আব্দুর রহমান রবিন ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী আব্দুর রহমান।
ইশতেহারে ১১টি অঙ্গীকারের পাশাপাশি ১২ বিভাগের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এসব বিভাগ হলো—খেলাধুলা ও ক্রীড়া; সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা; দপ্তর; ছাত্রীকল্যাণ; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি; গবেষণা ও উদ্ভাবন, সমাজসেবা ও পরিবেশ; স্বাস্থ্য; মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন; ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক; যোগাযোগ ও আবাসন এবং আইন ও মানবাধিকার বিভাগ।
ভিপি প্রার্থী আব্দুর রহমান রবিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট, খাদ্য ও চিকিৎসাসেবার দুরবস্থা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতির সীমিত সুযোগ, গবেষণায় বাজেটের অভাব এবং লাইব্রেরি-ল্যাবের সীমাবদ্ধতা— সবমিলিয়ে বর্তমান অবস্থা হতাশাজনক। এ বাস্তবতা বদলই আমাদের অঙ্গীকার।’
অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যের ১৭ দফা : দুপুর সাড়ে ৩টায় বুদ্ধিজীবী চত্বরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল। ইশতেহার পাঠ করেন জিএস প্রার্থী মুহাম্মদ ইয়াছিন উদ্দীন সাকিব।
ইশতেহারে নিয়মিত চাকসু নির্বাচন, দলীয় আধিপত্য ও সহিংসতা বন্ধ, বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নারী অধিকার, প্রশাসনিক কার্যক্রমের ডিজিটালাইজেশন, স্বাস্থ্যসেবা ও মানসিক সহায়তা নিশ্চিতকরণসহ নানা দাবি স্থান পায়।
এ ছাড়া তারা শাটল ট্রেনের শিডিউল বৃদ্ধি ও ডেমো ট্রেন পুনঃচালুকরণ, নতুন হল নির্মাণ, খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ, মাদকমুক্ত পরিবেশ, ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সেবা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা এবং নির্বাচিত হলে মাসিক জবাবদিহিমূলক প্রতিবেদন প্রকাশের অঙ্গীকার করেছে।
বৈচিত্র্যের ঐক্যের ৮ দফা : বেলা আড়াইটার দিকে চাকসু ভবনের সামনে বিভিন্ন বাম সংগঠনের ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল তাদের ৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে। ইশতেহার পাঠ করেন প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া, জিএস প্রার্থী সুদর্শন চাকমা ও এজিএস প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম জসিম।
প্যানেলটির ৮ দফায় স্থান পেয়েছে— নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠন, আবাসন সমস্যা নিরসন, খাদ্য-স্বাস্থ্য-পরিবেশের উন্নয়ন, শিক্ষা ও গবেষণার প্রসার, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াচর্চার সুযোগ বৃদ্ধি, জাতিগত বৈচিত্র্য ও নারীবান্ধব ক্যাম্পাস নির্মাণ, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং গণতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি।
ভিপি প্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ একাডেমিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। প্রথম মাসেই সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ‘ক্যাম্পাস চার্টার’ প্রণয়ন করা হবে।
এর আগে ‘বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট’ সমর্থিত প্যানেল ‘রেভলিউশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটি’ ১৭ দফা, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ৮ দফা ও ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রতির শিক্ষার্থী জোট’ ৩৩ দফার ইশতেহার ঘোষণা করে। এ ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কয়েকজন প্রার্থী তাদের ইশতেহার তুলে ধরেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ অক্টোবর। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে।
কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। অন্যদিকে ১৪ টি হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৯৩ জন। প্রতিটি হলে ১৪টি করে পদ রয়েছে। নির্বাচনে মোট ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ২৭ হাজার ৫১৮ জন শিক্ষার্থী। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, ভোট গ্রহণের ২৪ ঘণ্টা আগপর্যন্ত সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা করা যাবে। অর্থাৎ প্রার্থীরা ১৪ অক্টোবর সকাল ৯টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন।
মন্তব্য করুন