চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালা পাড়া এলাকায় স্বর্ণালংকার ও অর্থের লোভে খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী ও ১০ বছরের মেয়েকে হত্যার দায়ে মো. বেলাল হোসেন (১৯) নামে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক বেগম সিরাজাম মুনীরা এ রায় দেন। একইসঙ্গে বেলাল হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
একই আদেশে টিটু সাহা (৩৮) নামে এক জুয়েলার্স কর্মচারীকে ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. বেলাল হোসেন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার কোরবানপুরের বাসিন্দা মো. মন মিয়ার ছেলে। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থানার দারোগার হাট এমরান সড়কের নজরুল মঞ্জিলে অস্থায়ী ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন।
কারাদণ্ড পাওয়া আসামি টিটু সাহা (৩৮) একই জেলার একই থানার রঞ্জিত মাস্টারের বাড়ির বাসিন্দা নেপাল সাহার ছেলে। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার কোরবানীগঞ্জ বকশিরহাট এলাকার আনন্দ ভবনে বাস করেন। টিটু সাহা বাকলিয়ার থানার ইসহাক পুল মিয়া খান সড়কের আল নূর মার্কেটের মৌমিতা জুয়েলার্স নামে একটি স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী। রায়ের সময় উভয়েই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ১৯ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেন।
বিষয়টি চট্টগ্রাম মহানগর অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট দীর্ঘতম বড়ুয়া দিঘু কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সদরঘাটের মক্কা মদিনা খাসির মাংস দোকানের বিক্রেতা মো. শাহ আলম। ২০১৫ সালের ৭ মে সকাল সোয়া ৭টার দিকে রীতিমতো মাংস বিক্রি করতে দোকানে যান তিনি। সকাল ৯টায় স্ত্রী নাছিমা বেগম তার দুই ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেতে কল দিলে ব্যস্ততার কারণে তিনি যেতে পারেননি। ছেলেরা দোকানের সামনে এলে শাহ আলম তার ভাই মোস্তফাকে দিয়ে ছেলেদের স্কুলে পাঠান। পৌনে ১০টার দিকে শাহ আলমকে কল দেন তার শ্যালক আলাল। কলে জানানো হয়, তার স্ত্রী কন্যাকে জবাই করে হত্যা করে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে। এসময় শাহ আলম দ্রুত বাসায় যান ও স্ত্রী কন্যার জবাইকৃত মরদেহ দেখতে পান। পরে লক্ষ্য করেন তার স্টিল আলমারির ড্রয়ার থেকে ৪ ভরি স্বর্ণসহ মোট ২ লাখ ৭১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান হত্যাকারী।
এ ঘটনায় ৭ মে বাদী হয়ে সদরঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন শাহ আলম। মামলা দায়েরের পর ঘটনার তদন্তকালে প্রযুক্তির সহায়তায় মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে মো. বেলাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে সদরঘাট থানা পুলিশ। বেলাল হোসেন শাহ আলমের খালাতো ভাই। ৪ মে বেলালকে মাংসের দোকানের টিউবওয়েল ঠিক করে দিতে বলেন শাহ আলম। ৫ মে বেলাল টিউবওয়েল ঠিক করে শাহ আলমের বাসায় যান। তখন শাহ আলমের স্ত্রী নাছিমা বেগম স্টিল আলমারি থেকে টাকা বের করে বেলালকে দেওয়ার সময় সেখানে থাকা অর্থ ও স্বর্ণালংকার দেখে ফেলে বেলাল। পরে পরিকল্পনা করে খাসি জবায়ের ছুরি নিয়ে ৭ মে আবারও শাহ আলমের বাসায় যান বেলাল। দুই ছেলে রীতিমতো স্কুলের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লে তখন বেলাল বাসায় ঢোকে। এসময় নাসিমা বেগম তার দিকে এগিয়ে এলে ছুরি দিয়ে আঘাত ও গলায় কোপ দিয়ে জবাই করে বেলাল। এসময় ১০ বছরের মেয়ে রিয়া আক্তার ফাল্গুনী মাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও গলা কেটে জবাই করে। চোরাই স্বর্ণগুলো ক্রয় করে নিজ হেফাজতে রাখায় জুয়েলার্স কর্মচারী টিটু সাহাকেও গ্রেপ্তার করেন পুলিশ। ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত।
মন্তব্য করুন