আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগে এবার কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলমকে। তার জায়গায় দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদকে (সিআইপি)।
এদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে নিজে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাফর আলম। তবে নিজ এলাকায় তার অনুসারী ও বিভিন্ন অপরাধীদের নিয়ে সমাবেশ ডেকে নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘোষণা দেওয়ায় শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। আজ সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় চকরিয়া পৌরসভার সিষ্টম কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে সমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, এক ডজন মামলার আসামি শাহারবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নবী হোসেন, অর্ধ ডজন মামলার আসামি ও চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন, মাদক ও পরিবেশ মামলার আসামি ফাসিয়াখালীর চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, একাধিক মামলার আসামি বিএমচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বদি আলম ও সাবেক যুবদল নেতা থেকে জাফরলীগে আসা ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর।
জাফর আলমের এমন ঘোষণার পর থেকে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলের সাধারণ কর্মীরাও।
তথ্য মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে কক্সবাজার-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জাফর আলম। এরপর থেকে চকরিয়া-পেকুয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন তিনি। এলাকার চিহ্নিত চোর, ডাকাত, ভূমিদস্যু ও জামায়াত-বিএনপির লোকজন নিয়ে গড়ে তোলেন জাফরলীগ। সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ড, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে শত কোটি টাকার মালিক বনে যায় পুরো পরিবার। তাদের পরিবারের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। তার বিতর্কিত এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে এবার দলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেছেন জাফর আলম। সোমবার (২৭ নভেম্বর) নিজের অনুসারীদের নিয়ে সমাবেশ ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় তার মঞ্চে ছিলেন গরু চুরি মামলাসহ অর্ধডজন মামলার আসামি, অস্ত্রবাজ ও ডাকাত। তার এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা। এর আগে সোমবারের সমাবেশ সফল করতে নিজের অনুসারীদের মোবাইল ফোনে নির্দেশনাও দেন জাফর।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সুবিধার জন্য আওয়ামী লীগে আসা জাফর আলম মনোনয়ন না পেয়ে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তার আসল চরিত্রের প্রকাশ করেছেন। তার কাছে আওয়ামী লীগ কখনো নিরাপদ ছিল না।
পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী বলেন, ‘জাফরের লালিত সন্ত্রাসী ও ডাকাতের ভয়ে আমরা এতদিন কথা বলতে পারিনি। এখন তার অপরাধের কথা বলবে জনগণ। আজকেও তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে মিটিং করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘গেল পাঁচ বছর দলের পক্ষে থাকা তো দূরের কথা, উল্টো কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। তাকে মনোনয়ন না দিয়ে নেত্রী দলকে সুরক্ষা দিয়েছেন।’
এদিকে জাফর আলমকে বাদ দিয়ে সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণার পর কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা গেছে।
মন্তব্য করুন