ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাস রমজান। আর রমজানে ইফতারের অপরিহার্য অনুষঙ্গ খাবার খেজুর। বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় দেশে যার চাহিদা বৃদ্ধি পায় অন্তত ১২ গুণ। সঙ্গে বাড়ে দামও। কিন্তু এবার রমজান আসার আরও দুই মাস আগেই আকাশ চুম্বি হয়ে উঠেছে পণ্যটির দাম। দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। মিলছেও না বেশিরভাগ দোকানে।
ক্রেতারা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে খেজুরের দাম। যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। রোজার আগেই আকাশচুম্বী এ দাম ভোগাবে পুরো রমজানজুড়েই। অন্যদিকে অস্বাভাবিক এই দাম বৃদ্ধির জন্য খেজুর আমদানিকারকদের কারসাজিকে দায়ি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। এতে কমে গেছে বিক্রি। তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, ফলমূলকে বিলাসি পণ্যে অন্তর্ভুক্ত করায় দেশে এরকম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে খেজুরের দাম। উচ্চ শুল্কের কারণে আমদানি হচ্ছে চাহিদার তুলনায় নামমাত্র।
বাজারের সবচেয়ে কম দামি খেজুর হিসেবে পরিচিত জিহাদি ও দাবাস। বর্তমানে প্রতি কেজি এই জাতের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায়। বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। শুধু জিহাদি বা দাবাস নয়, সব খেজুরের দামই বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দাবাস খেজুর ৪৫০ টাকা, জিহাদি খেজুর ২৪০ টাকা, আজওয়া খেজুর ৯০০ টাকা, বরই খেজুর ৪০০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ৯০০ টাকা ও মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২২ সালেও চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে পাঁচ কেজি ওজনের ‘মরিয়ম খেজুর’ বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার টাকায়। পরের বছর ২০২৩ সালে সেই খেজুর বিক্রি হয়ে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়।
দেশে খেজুরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজানেই দরকার হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালকর ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৩৮ টন খেজুর। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৭৩ টন খেজুর আমদানি করা হয়েছে। এর আগের বছর ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯১ হাজার ৯০৪ টন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬২ হাজার ২৭৪ টন খেজুর আমদানি করা হয়।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত খেজুর আমদানি হয়েছে। যেসব খেজুর আমদানি করা হয়েছে সেগুলো খালাসের আগে আমরা যাচাইবাছাই করেছি। নষ্ট, পচা খেজুর এবার আমদানি করা হয়নি।
চট্টগ্রামের খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস কে ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ শফিউল আজম টিপু বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার মানভেদে খেজুরের দাম বেড়েছে। ডলার সংকট, জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধিসহ আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খেজুরের দাম বেড়েছে। তবে পর্যাপ্ত খেজুর এবার আমদানি হয়েছে। সংকট হবে না।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (মেট্রো) মো. আনিছুর রহমান বলেন, খেজুরের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে, বিষয়টি আমরাও শুনেছি। এরইমধ্যে কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করেছি। এতে দেখেছি, গত বছরের তুলনায় এবার খেজুরের দাম কিছুটা বেশি। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাদের কেনা বেশি পড়ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আমদানিকারকদের কাছ থেকে তারা বেশি দামে খেজুর কিনেছে। তবে এখন পর্যন্ত আমদানিকারকদের কাছ থেকে বিষয়টি যাচাই করা হয়নি। খেজুরের দাম কেন বাড়ছে তা আমরা তদারকি করছি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ডলার সংকটে খেজুরের দাম বেড়েছে বলাটাও একটা অজুহাত। বিগত বছরে যে পরিমাণ খেজুর আমদানি করা হয়েছিল তা আরও দুই বছর চলবে। যা এখনো মজুত আছে। তেল, চিনিসহ অন্যান্য পণ্য ডলার সংকটের কথা বলে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। সেই সুযোগে খেজুর আমদানিকারকরাও এই অজুহাত দিয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করছে। তারা যে সংকটের কথা বলে, বাস্তবে সে রকম সংকট নেই। বাজার মনিটরিং না থাকায় যে যার মতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।
মন্তব্য করুন