অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী ও তার স্ত্রী জামিলা নাজনীলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলা তদন্তের স্বার্থে তাদের আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১৫ মে) দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ ড. আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী ছানোয়ার আহমেদ (লাভলু) কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১৫ কোটি ২৬ লাখ ৯২ হাজার ৪১৬ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জন করে দখলে রাখার অভিযোগে আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী ফৌজদারহাট স্টেশন রোডে অবস্থিত সেভেন বি অ্যাসোসিয়েটসের প্রোপ্রাইটর ও রাইজিং গ্রুপের উপদেষ্টা মো. আসলাম চৌধুরী ২০০১ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি, সলিমপুর, সোনাইছড়ি, মসজিদ্দা, ভাটেরখীল, টেরিয়াইল, গুলিয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকা এবং চট্টগ্রাম নগরের কাটগড়, মুরাদপুর ও বোয়ালিয়া মৌজায় সবমিলিয়ে ১৪৬টি সাফ কবলার মাধ্যমে মোট ১৬ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ১৮৫ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। এ ছাড়া ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসায় ও অংশীদারি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ, বিভিন্ন ব্যাংক-বিমা প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ, আসবাবপত্র ও স্বর্ণালঙ্কার মিলিয়ে ৩৬২ কোটি ৭১ লাখ ৩৮ হাজার ২৮০ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন।
১৯৯৭-৯৮ সাল থেকে ২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত তিনি আয়কর নথিতে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৩১ টাকা আয় দেখিয়েছেন। পারিবারিকসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় দেখিয়েছেন ৮ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার ৯১ টাকা। ফলে তার প্রদর্শিত সঞ্চয়ের পরিমাণ ১৯ কোটি ৩০ লাখ ১৮ হাজার ৭৪০ টাকা। কিন্তু তিনি ঘোষিত সঞ্চয়ের মধ্যে এক কোটি ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪০ টাকার আয়ের সপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ দুদককে দেখাতে পারেননি। এর ফলে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ কোটি ২৭ লাখ ৮৫ হাজার ২০০ টাকা।
আসলাম চৌধুরীর নিট সম্পদ ৩৩ কোটি ৫৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬১৬ টাকা। এর বিপরীতে গ্রহণযোগ্য আয় ১৮ কোটি ২৭ লাখ ৮৫ হাজার ২০০ টাকা। সে হিসাব করলে আসলাম চৌধুরীর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ কোটি ২৬ লাখ ৯২ হাজার ৪১৬ টাকা। ২০০১ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুনে এ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করে দুদক।
আদালত সূত্র জানায়, গত ২৮ এপ্রিল আসলাম চৌধুরীকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন দুদকের এই তদন্ত কর্মকর্তা।
এরপর ৭ মে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক, প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসলাম চৌধুরী ও তার স্ত্রী জামিলা নাজনীল মাওলার আয়কর নথি জব্দের অনুমতি প্রার্থনা করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মঙ্গলবার (১৪ মে) শুনানি শেষে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে দুই আসামির আয়কর নথি জব্দের আদেশ দেন। তবে আদেশটি বুধবার (১৫ মে) পাস হয় বলে জানিয়েছেন দুদক পিপি কাজী ছেনোয়ার আহমেদ লাভলু।
প্রসঙ্গত, বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী ২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গ্রেপ্তার হন। দুর্নীতি, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহসহ বিভিন্ন অভিযোগে আট বছর ধরে কারাবন্দি আছেন তিনি।
মন্তব্য করুন