

রাস পূর্ণিমা উৎসব ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে মোংলায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের টেকসই বিকল্প বিষয়ে আলোচনা সভা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই দিনব্যাপী এই কর্মসূচি নরওয়ে সরকারের আর্থিক সহায়তায় যৌথভাবে আয়োজন করে পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই) ও জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (ইউনিডো)। কর্মসূচিটি অনুষ্ঠিত হয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ওয়াইল্ডটিমের কনজারভেশন বায়োলজি সেন্টার, টাইগার হাউস, জয়মনি, মোংলায় (সুন্দরবন)।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের পরিচালক সাদিকুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগের বন সংরক্ষক মো. রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াইল্ডটিম কনজারভেশন বায়োলজি সেন্টারের প্রধান নির্বাহী ব্যবস্থাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন, ইউনিডোর জাতীয় প্রকল্প ব্যবস্থাপক সত্য ভট্টাচার্য এবং ইউনিডো বাংলাদেশের জাতীয় বিশেষজ্ঞ এসএম আরাফাত। অনুষ্ঠানে বিডি ক্লিন মোংলা, কয়েকটি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং নেপালের পর্যটকরাও অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনা পর্বে ড. আবদুল্লাহ আল মামুন সবাইকে প্লাস্টিকমুক্ত রাস মেলা উদযাপনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক শুধু পরিবেশ নয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করছে।
ইউনিডোর জাতীয় প্রকল্প ব্যবস্থাপক সত্য ভট্টাচার্য বলেন, সুন্দরবন বাংলাদেশের জন্য প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। এই অমূল্য বন ও এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে তিনি সবাইকে নদীতে প্লাস্টিক না ফেলার আহ্বান জানান।
তিনি উল্লেখ করেন, প্লাস্টিক বর্জ্য খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের মতো জটিল রোগ সৃষ্টি করছে। তিনি ‘Reduce, Reuse, Recycle’ বা ‘থ্রি-আর’ নীতির ওপর ভিত্তি করে প্লাস্টিক দূষণ কমানোর বাস্তবমুখী উপায় উপস্থাপন করেন।
ইউনিডো বাংলাদেশের জাতীয় বিশেষজ্ঞ এসএম আরাফাত বলেন, এই ধরনের সচেতনতামূলক আলোচনা সভা থেকে পাওয়া জ্ঞানকে দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। তিনি সবাইকে নির্ধারিত স্থানে প্লাস্টিক ও অন্য বর্জ্য ফেলার আহ্বান জানান এবং বিশেষ করে পর্যটন এলাকায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার না করার অনুরোধ করেন।
ওয়াইল্ডটিমের প্রধান নির্বাহী ব্যবস্থাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন বাংলাদেশের মানুষকে মায়ের মতো লালন করে, তাই এই বন রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। তিনি ভক্তদের অনুরোধ করেন যেন তারা ডিসপোজেবল প্লাস্টিক ব্যবহার না করেন, বিষ দিয়ে মাছ না ধরেন এবং হরিণ শিকার থেকে বিরত থাকেন।
প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগের বন সংরক্ষক মো. রেজাউল করিম ভক্তদের আহ্বান জানান যেন রাস মেলার সময় কোনো প্লাস্টিক বর্জ্য নদীতে না ফেলা হয়। তিনি নদীগুলোকে পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এবং এই উদ্যোগ ধরে রাখতে নিয়মিত সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সাদিকুল ইসলাম বলেন, প্লাস্টিক আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মারাত্মক ক্ষতি করছে। এখনই আমাদের এর ব্যবহার বন্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
দুই দিনব্যাপী এই কর্মসূচির প্রথম দিনে জয়মনি ঘাট ও জয়মনি বাজার এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হয়। তীর্থযাত্রী ও স্বেচ্ছাসেবীরা এতে অংশ নেন এবং প্রায় ১০০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা জনসাধারণকে অনুরোধ জানান যেন তারা এলাকাটি প্লাস্টিক বর্জ্যে নোংরা না করেন।
দ্বিতীয় দিনে, ৩ নভেম্বর ভোর ৫টা থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা নৌকায় নদীজুড়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। লাউডস্পিকারের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বার্তা প্রচার করা হয় এবং বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব পাট ও কাপড়ের ব্যাগ, স্কার্ফ ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। প্রায় ৪০০টিরও বেশি নৌকা থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ ও সচেতনতা প্রচার চালানো হয়, যেখানে তীর্থযাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্লাস্টিক সামগ্রী স্বেচ্ছাসেবীদের হাতে তুলে দেন।
অভিযানটি প্লাস্টিকমুক্ত রাস মেলা উদযাপন এবং সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার সমন্বিত আহ্বানের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
মন্তব্য করুন