প্রফেসর ইমেরিটাস সুলতানা সারাওয়াতারা জামানের (১৯৩২-২০২০) তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল শুক্রবার (২২ মার্চ)। তাকে স্মরণ এবং আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন স্বজনরা।
১৯৬০-এর দশকের শেষের দিক থেকে অধ্যাপক জামান প্রতিবন্ধী শিশুদের সঙ্গে যুক্ত কলঙ্ক অপসারণের ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাদের শিক্ষাগত ও সামাজিক প্রয়োজন মেটানোর এবং পুনর্বাসনের জন্য কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
১৯৬৭ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজি পড়ান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগে প্রথম শিশু বিকাশ ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি সোসাইটি অফ দ্য কেয়ার অ্যান্ড এডুকেশন অব মেন্টালি রিটার্ডেড চিলড্রেন (এসসিইএমআরসি) প্রতিষ্ঠা করেন; যা পরবর্তীতে সোসাইটি ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অফ চিলড্রেন উইথ ইন্টেলেকচুয়াল ডিজঅ্যাবিলিটি বাংলাদেশ নামকরণ করা হয়।
১৯৮৪ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন (বিপিএফ) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর স্পেশাল এডুকেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯০ সালে তিনি বাংলাদেশে প্রথম বিশেষ শিক্ষা বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) স্থানান্তরিত হন।
১৯৭৪ সালে তিনি এমরি ইউনিভার্সিটি, আটলান্টা, জর্জিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বের প্রান্তিক শিশুদের জন্য তৈরি করা প্রফেসর জামানের গবেষণার পদ্ধতিগুলো বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অধ্যাপক সুলতানা জামানের অসংখ্য সামাজিক অবদানের মধ্যে রয়েছে সমাজ উন্নয়ন সংস্থার (দীপশিখা স্কুল) প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশে মেয়েদের স্কাউটিংএ নিয়ে আসা। তাকে প্রদত্ত অনেক প্রশংসা ও পুরস্কারের মধ্যে ২০০৮ সালে পাওয়া রোকেয়া পদক উল্লেখযোগ্য।
ভারতের যশোর সীমান্তের কাছে অধ্যাপক জামান পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীতে শরণার্থী শিবিরে পাওয়া পরিত্যক্ত শিশুদের জন্য একটি এতিমখানা (খেলা ঘর) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদে আহত মুক্তিযোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিকদের জন্য একটি অ্যাডভান্সড ড্রেসিং স্টেশন (এডিএস) প্রতিষ্ঠা করেন; যেটি ছিল সেক্টর ৭-এর মধ্যে একটি সাবসেক্টর যা তার স্বামী মরহুম লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামানের (বীর উত্তম) নেতৃত্বে ছিলেন।
১৯৭২ সালে রাজশাহী বিভাগের অনেক নারী, যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা গর্ভধারণ করেছিলেন, তাদের সহায়তা করেছিলেন তাদের সন্তানদের জন্য চিকিৎসা এবং পরে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে।
অধ্যাপক জামান দুই কন্যা- অধ্যাপক নায়লা জামান খান এবং নৃত্যশিল্পী ও গবেষক লুবনা মারিয়াম, নাতি-নাতনি ও পরিবার-পরিজন রেখে গেছেন। তার ছেলে কাজী নাদিম ওমর বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিপিএফ দ্বারা পরিচালিত অন্তর্ভুক্ত স্কুলগুলোতে প্রার্থনা এবং স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তার কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে এবং তার নামে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর স্পেশাল এডুকেশনের নাম পরিবর্তন করার একটি প্রচেষ্টা ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা শুরু করা হবে।
মন্তব্য করুন