নরসিংদীতে ট্রেনে কাটা পড়ে ৫ জনের প্রাণহানির ঘটনার তিনদিন পার হলেও মেলেনি কারোর পরিচয়। নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে এবং স্বজনদের খোঁজে রেলওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে সম্পৃক্ত ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল সড়ক এবং ময়মনসিংহসহ সব স্টেশনে এবং রেলওয়ে থানায় লাশের ছবিসহ বিভন্ন আলামতের ছবি পাঠিয়েছেন।
বুধবার (১০ জুলাই) আদালতের অনুমতি নিয়ে নিহত ব্যক্তিদের ডিএনএ ও ভিসেরা টেস্টের জন্য উদ্ধার করা আলমত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
আর আগে সোমবার (৮ জুলাই) রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ভোর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িসংলগ্ন কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
রেলওয়ে পুলিশ বলছে, নিহতদের নাম-পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে। তারপরও তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। মারামারি বা ধাক্কাধাক্কি করতে গিয়ে ট্রেনের ছাদ থেকে দুই বগির মাঝে বা ইঞ্জিন থেকে পড়ে গিয়ে, রেললাইনে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শুয়ে-বসে থেকে বা অন্য কোথাও হত্যার পর তাদের লাশ ঘটনাস্থলে ফেলে রাখা হয়েছে কি না, এই বিষয়গুলো সামনে রেখে তদন্ত করছে পুলিশ।
ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি আলীম হোসেন শিকদার বলেন, রেলওয়ে থানা পুলিশ ডিএনএ টেস্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করে রেখেছে। যদি লাশের কোনো আত্মীয়স্বজন এসে দাবি করেন, তাদের সঙ্গে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এ ঘটনায় ভৈরব রেলওয়ে থানায় সোমবার রাতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শহীদুল্লাহকে। তাছাড়া নিহতের পরিচয় শনাক্তের জন্য রেলওয়ে সম্পৃক্ত সকল থানায় লাশের ছবিসহ বিভন্ন আলামতের ছবি পাঠানো হয়েছে।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, পাঁচজন একসঙ্গে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহতের ঘটনার কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না। সেদিন তাদের সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল, তা খুঁজে বের করতে সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শীও নেই। ঘটনাস্থল থেকে কোনো মোবাইল ফোনও পাওয়া যায়নি। এখনো তাদের কোনো স্বজনের সন্ধান মেলেনি। তারা কোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য পান বা সেবন করত কি না তা জানার জন্য আমাদের সংগৃহীত লালা ভিসেরা রিপোর্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নরসিংদীর পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল করিম বলেন, তাদের পোশাক পরিধি দেখে মনে হচ্ছে তারা প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ। তাদের পরিচয় শনাক্ত করার জন্য ফিঙারপ্রিন্ট নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডাটা বেইজে অন্তর্ভুক্ত না থাকায় তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। তাছাড়া ঢাকা থেকে এক্সপার্ট এনেও চেষ্টা করা হয়েছে। তবে যদি কোনো আত্মীয়স্বজন এসে পরিচয় বের করতে চান, একমাত্র ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে জানা সম্ভব। আমরা সে সকল আলামত সংগ্রহে রেখেছি।
এর আগে, সোমবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের নরসিংদীর রায়পুরার খাকচক এলাকায় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ট্রেনে কাটা পড়ে ৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। খবর পেয়ে নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ, রায়পুরা থানা পুলিশ, পিবিআই এবং ঢাকা রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে ছুটে যান। কিন্তু পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টিম ও ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত লাশের ফিঙারপ্রিন্ট সংগ্রহ করেন। তবে ফিঙারপ্রিন্টের পরীক্ষায় এসব লাশের কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। ট্রেনে কাটাপড়া ৫ জনের বয়স আনুমানিক ১৫ থেকে ২৫ বছর।
মন্তব্য করুন