কুড়িগ্রামে নদ-নদীগুলোর পানি সামান্য কমলেও ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৯ উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ। জেলার ৪২১টি চর-দ্বীপচর অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে ৭ দিন ধরে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন মানুষজন। বাড়িঘরে পানি থাকায় লোকজন নৌকায় বসবাস করছেন।
বুধবার (১০ জুলাই) সারাদিন সরেজমিনে দেখা যায়, ২য় ধাপের বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না । চরাঞ্চলগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কলাগাছের ভেলায় সম্বল এসব বানভাসীদের। একবেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে থাকছেন তারা। সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছলেও বেসরকারিভাবে তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
অনেকেই সহায়তা পেলেও রান্না করার সরঞ্জাম না থাকায় শুকনো খাবারের ওপর নির্ভর হয়ে আছেন। এমন পিরিস্থিতিতে স্থানীয়রা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন গবাদিপশু নিয়ে। কাঁচা ঘাস ও খড় না থাকায় ভোগান্তি চরমে উঠেছে। টিউবওয়েল ও টয়লেট তলিয়ে থাকায় পয়ঃনিষ্কাশনেও বিপাকে তারা। জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে ৮৩টি মেডিকেল টিম কাজ করলেও দুর্গম চরাঞ্চলগুলোতে তাদের দেখা যাচ্ছে না।
চর ভগবতীপুরের বাসিন্দা এরশাদুল হক বলেন, ‘গরুগুলো নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আমরা এক বেলা না খেয়ে থাকতে পারলেও অবলা পশু তো পারে না। খুব কষ্ট হচ্ছে।’
আরেক বাসিন্দা চানু বেগম বলেন, ‘স্বামী নেই, ১টা বাচ্চা নিয়া নৌকার মধ্যে আছি। সকাল থেকে আজ অনাহারে। কেউ কোনো সহযোগিতা করেনি। অবর্ণনীয় কষ্টে আছি।’
দুপুর ৩টার জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র দেওয়া তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেমি, চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেমি, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. মঞ্জুর এ মুর্শেদ বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় ৮৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ২০ হাজার খাবার স্যালাইন, ২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ৫ হাজার মেট্রো ট্যাবলেট বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, মঙ্গলবার জেলার নদ-নদীর পানি গুলো সামান্য কমলেও উজানে ভারি বৃষ্টিপাত হবার কারণে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারে পানি বাড়ছে। অন্যদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তা, ধরলাসহ অন্যসব নদ-নদীগুলোতে পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, বন্যা মোকাবিলায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত ৫৪২ টন চাল, ৩২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ২৩ হাজার ১২০ প্যাকেট শুকনো খাবার ৯ উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ চলমান রয়েছে।
মন্তব্য করুন