নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরশহরের রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন অধ্যক্ষ মাহাতাব উদ্দিনকে মারধর করে জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে ওই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গুরুদাসপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শারীরিক লাঞ্ছিতের শিকার ওই অধ্যক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী বলেন, মাহাতাব উদ্দিন দুপুরে তার কক্ষে বসে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে মাহাতাব উদ্দিনকে ধমকাতে থাকেন। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ মাহাতাব উদ্দিনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে কলেজ থেকে বের করে দেন সভাপতি। জাহিদুল ইসলাম গুরুদাসপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আছেন।
তারা বলেন, মাহাতাব উদ্দিনকে বের করে দেওয়ার পর অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন বাংলা বিষয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক রুহুল করীম আব্বাসী। এর কিছু পরে বিকাল তিনটার দিকে কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে আরও একটি তালা ঝুলিয়ে দেন মাহাতাব উদ্দিন। খবর পেয়ে সভাপতি জাহিদুল ইসলামের নির্দেশে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক রুহুল করিম আব্বাসী, আব্দুস সামাদ, জয়নাল আবেদীন ও ফিরোজ হোসেন বিকেল ৪টার দিকে কলেজে প্রবেশ করে মাহাতাবের ঝুলানো তালাটি ভেঙে ফেলেন। তবে এ ব্যাপারে ওই শিক্ষকরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বছর দুয়েক আগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে রুহুল করিম আব্বাসীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয় পরিচালনা কমিটি। ওই সময় মাহাতাব উদ্দিনকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিছুদিন দায়িত্ব পালনের পর মাহাতাব উদ্দিনকে কলেজ থেকে বের করে দেন রুহুল করিম আব্বাসী। এদিকে মাস দুয়েক আগে উচ্চ আদালত থেকে নিজের স্বপক্ষে আদেশ নিয়ে আবারো কলেজে প্রবেশের চেষ্টা করেন মাহাতাব উদ্দিন। কিন্তু তাকে কলেজে দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রুহুল করিম। ওই তালা ভেঙে আবার কলেজে প্রবেশ করে দুই মাস ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মাহাতাব উদ্দিন। তবে কলেজের প্রশাসনিক কাগজপত্র স্বাক্ষর করছিলেন দুজনই।
স্থানীয়রা জানান, নিয়োগ বাণিজ্য, আর্থিক অনিয়ম, অধ্যক্ষ পদ নিয়ে দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে কলেজটি মুখথুবড়ে পড়েছে। কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ শিক্ষার্থীদের ফলাফলে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে।
শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত অধ্যক্ষ মাহাতাব উদ্দিন বলেন, প্রতিদিনের মতো তিনি কলেজের প্রশাসনিক কাজ করছিলেন। হঠাৎ করে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে কলেজ থেকে বের করে দেন।
রুহুল করিম আব্বাসীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, এসব ঘটনায় কোনো মন্তব্য তিনি করবেন না। ঘটনার সত্যতা নিয়ে কিছু জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন।
সভাপতি জাহিদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, তিনি কলেজে প্রবেশ করে মাহাতাব উদ্দিনকে কলেজ থেকে বের হয়ে যেতে বলেছেন মাত্র। শারীরিকভাবে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়নি।
মন্তব্য করুন