রফিকুল ইসলাম, রংপুর
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৪ পিএম
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৪, ০২:০৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মেয়ে জানে বাবা থাকেন দোকানে

নিহত সাজ্জাদ হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
নিহত সাজ্জাদ হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

তিন বছর বয়সী কন্যা জান্নাবি আক্তার ছিনহা। বাবার আদরের মেয়ে। বাবা বাড়িতে না আসা পর্যন্ত ঘুমাত না। কিন্তু বাবা গেছে দোকানে, বেচা-বিক্রি বেশি তাই বাড়িতে আসেন না! দোকান থেকে বাবার না আসার অভিমানে কখনো ডুকরে কাঁদে, কখনো মাঝরাতে বাবার কাছে যাওয়ার বায়না ধরে।

কিন্তু বাবা আসে না, ঘুম থেকে উঠে বাবাকে দেখবে, তা-ও দেখা হয় না। এমন অপেক্ষায় দিন-রাত কাটছে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রংপুরের পৌরবাজার এলাকায় ঘটে যাওয়া সংঘর্ষে নিহত সাজ্জাদ হোসেনের মেয়ে ছিনহার।

নিহত সাজ্জাদ হোসেন রংপুরের আরসিসিআই (পূর্ব শালবন) এলাকার মৃত ইউসুফ আলী বাবুর ছেলে। পেশায় ফুটপাতে মরিচ, পেঁয়াজ আর হলুদসহ কাঁচা তরকারি বিক্রেতা। আগে বাসাবাড়িতে দিন হাজিরা হিসেবে রাজমিস্ত্রির কাজ করলেও মৃত্যুর ৮ থেকে ১০ দিন আগে আরসিসিআই মোড়ে ফুটপাতে এ ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা করার জন্য স্থানীয় রুহিন নামে এক ব্যক্তি তার ছেলে রিফাতসহ তাদের ব্যবসা করার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন।

পরিবার এবং প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার দিন শুক্রবার সাজ্জাদ স্থানীয় বিসমিল্লাহ মসজিদে নামাজ শেষে দুপুরে বাড়িতে খাবার খেয়ে দোকানের হলুদ আর পেয়ারা কিনতে পৌর বাজারে যান। তখন রংপুর প্রেসক্লাব থেকে কাছারি বাজার পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় পৌরবাজারে সংঘর্ষ শুরু হলে তিনি মারা যান। বিকেল ৪টার দিকে খবর আসে সাজ্জাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তার লাশ রংপুর মেডিকেলে পড়ে আছে। এই খবর পাওয়ার পর তার ন্যাশনাল আইডি কার্ড, স্ত্রী ও ছোট ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে লাশ বাড়িতে আনা হয়।

সাজ্জাদের স্ত্রী জিতু বেগম বলেন, ওইদিন আমি আমার বাবার বাড়িতে গেছি। আমাকে বলেছে, বিকেলে দোকানের জন্য পৌর বাজার থেকে হলুদ আনবে, আর সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে যাবে। কিন্তু সেই সন্ধ্যায় শুনি তিনি মারা গেছেন। আমার তো কিছু নেই, কী করে খাব, মেয়েটাকে কীভাবে বড় করব। মেয়ে তো ওর বাবাকে ছাড়া কিছু বোঝে না। ওকে বোঝাতেই পারছি না যে, ওর বাবা মারা গেছে। শুধু কান্না করে। মেয়েটাকে বড় করতে সবার সহযোগিতা চাই।

সাজ্জাদের মা ময়না বেগম বলেন, আমার তিন মেয়ে, দুই ছেলে। আমার স্বামী অনেক আগেই মারা গেছেন। সংসার চালাতে আমি ঢাকায় থাকা মেয়ের কাছে যাই, সেখানে গার্মেন্টসে চাকরি নিই। সন্ধ্যার আগে শুনি সাজ্জাদ মারা গেছে। আমি আমার ছেলের মরা মুখটাও দেখতে পাইনি। সংবাদ শোনার পর বাসে উঠেছি; কিন্তু কিছুদূর পর গাড়ি আর যায়নি। আমি ওর মুখটা দেখতে পাইনি। ছয় দিন পর বাড়িতে আসছি।

সাজ্জাদের মা জানান, আমাদের কিছু নেই। ওর ছোট একটা মেয়ে, আর স্ত্রী। পুরো সংসার সে চালাত। ছেলে মারা যাওয়ার পর সংসার চলছে না। কাল কী খাব সে চাল, ডাল নেই। এলাকাবাসী কিছু দিছে, সে টাকা দিয়ে এ কয়দিন চলছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চাই।

প্রতিবেশীরা জানান, সাজ্জাদরা তিন বোন, দুই ভাই। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। তারা খুবই গরিব মানুষ। দিন আনে দিন খায়। সাজ্জাদই তাদের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল। সে-ও মারা গেছে। তাদের সংসারের খরচ চলার মতো অবস্থা নেই।

স্থানীয় কাউন্সিলর ফুলু জানান, সে খুব ভালো ছিল। দিনমজুর। কিছুদিন হয় ফুটপাতে ব্যবসা শুরু করে। সাধারণ ছেলে। কোনো রাজনীতি করত না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এক যুগ পর আবার মঞ্চে পালাকারের ‘ডাকঘর’

অবশেষে হাত মেলালেন ভারত-পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা

যে উপায়ে পেঁয়াজ কাটলে চোখের পানি ঝরবে না

‍‌‌‘রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নির্ভয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে কালবেলা’

‘বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমে কালবেলা জনগণের মুখপত্র হিসেবে কাজ করছে’

চমক রেখে ওয়ানডে দল ঘোষণা বাংলাদেশের

মেট্রোরেল চলাচলের নতুন সময়সূচি প্রকাশ

যশোর বোর্ডে ২০ প্রতিষ্ঠানে পাস করেনি কেউ

সাদ হত্যা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা হাবিব গ্রেপ্তার

স্ত্রীসহ সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা 

১০

উপদেষ্টাদের কল রেকর্ড কোনো ব্যক্তির কাছে থাকাটা ‘বেআইনি ও ব্লাকমেইলিং’ : রিজভী

১১

জাতীয় বেতন স্কেল কবে থেকে, জানালেন শিক্ষা সচিব

১২

ময়মনসিংহে ১৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাস করেনি কেউ

১৩

আবারও একসঙ্গে রাজ-মানজুর-রুমি

১৪

রাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন

১৫

আর্জেন্টিনা-মরক্কো ফাইনাল কবে কোথায়

১৬

চট্টগ্রামে ফল বিপর্যয়, পাসের হার কমেছে ১৮ শতাংশ

১৭

এইচএসসির ফলাফল খারাপ হওয়ায় শিক্ষার্থীর কাণ্ড

১৮

জুলাই জাতীয় সনদে যা রয়েছে

১৯

শিক্ষকদের ‘মার্চ টু যমুনা’ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

২০
X