তিন বছর আগে শুরু হয়েছিল সড়কটির সংস্কারকাজ। এরই মধ্যে মেয়াদ বেড়েছে তিন দফায়। ১০ মাসের কাজ শেষ হয়নি তিন বছরেও। আড়াই বছরের বেশি মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এমন দুরবস্থা নেত্রকোনার কলমাকান্দা-দূর্গাপুর সড়কের গজারমারী স্থান থেকে খারনৈ ইউপি অফিস পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়কটির সংস্কারকাজ। এখনো কাজের বাকি ৪০ শতাংশ। এতে সড়কে দেখা দিয়েছে বড় বড় গর্তের। খানাখন্দে ভরা সড়কে ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে সড়কটিতে।
কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয় লোকজন এনিয়ে প্রতিবাদ করলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কলমাকান্দা-দূর্গাপুর সড়কের গজারমারী স্থান হতে খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ওই সড়কের সংস্কার কাজে ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা। কাজটির দায়িত্ব পায় মেসার্স বিলকিছ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
২০২১ সালের ৮ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু হয়, যা ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরও কাজটি শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সে কারণে সময় বাড়ানো হয় তিন দফায়। বাড়ানো সময় অনুযায়ী চলতি বছরের ৩০ আগস্ট কাজ শেষ হওয়ার কথা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কে কাজের কোনো অগ্রগতি ছিল না শুরু থেকেই। সড়কের কোন কোন জায়গায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। মাঝে মধ্যে কিছু লোকজন এসে একটু কাজ করে আবার চলে যায়। কাজ শেষ না হওয়ায় প্রতিবছর ভেঙে যায় সড়কটি। এ অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারীরা।
জানা গেছে, ওই সড়ক দিয়ে খারনৈ, লেংগুরা ও নাজিরপুর ইউনিয়নের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। সড়কের কাজ শেষ হলে উপজেলার সঙ্গে খারনৈ ইউনিয়নের যোগাযোগমাধ্যম সহজ হবে। এ ছাড়া প্রতিদিন অর্ধশতাধিক যানবাহন ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীরা চলাচল করে থাকে। কিন্তু সড়কের কাজ বন্ধ থাকায় দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ।
সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ইটের খোয়া উঠে গেছে। পাহাড়ি ঢলে পানির স্রোতে ভেঙে গেছে সড়ক। অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। গর্তের পাশে স্থানীয়দের তৈরি বাঁশের চাটার ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ।
খারনৈ ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক জানান, সড়কের কাজ কবে শেষ হবে কারও জানা নেই। কয়েক বছর ধরেই ভোগান্তি পোহাচ্ছি আমরা। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গাফিলতি করে কাজ ফেলে রেখেছে। কাজ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করছি, কাজটা যেন দ্রুত শেষ হয়।
ইজিবাইক চালক ফজলুর রহমান বলেন, কয়েক বছর ধরেই কাজ চলছে, কিন্তু শেষ হয় না। ঠিকমতো সড়কের কাজ করে না লোকজন। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক ভেঙে গেছে। যাতায়াতের খুবই কষ্ট, মানুষ যাতায়াত করতে পারছে না।
সড়ক সংস্কারের ধীরগতির বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট মামুনুর রশিদ ফরহাদের মোবাইলে বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুই দফা ফোন দেওয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
উপজেলা প্রকৌশলী মমিনুল ইসলাম বলেন, চলতি মাসেই কাজের তৃতীয় দফা মেয়াদ শেষ হবে। চলমান পরিস্থিতিতে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ঠিকাদারকে রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ করতে বারবার বলা হয়েছে। ঠিকাদার দ্রুত কাজটি শেষ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মন্তব্য করুন