পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:৪১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘আমি যদি মারাও যাই তুমি মনে কিছু রেখ না’

নিহত মঞ্জুরুল ইসলাম। ছবি : কালবেলা
নিহত মঞ্জুরুল ইসলাম। ছবি : কালবেলা

স্ত্রীর নিষেধ সত্ত্বেও ছাত্রদের সঙ্গে ২০ জুলাই সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন রিকশাচালক মঞ্জুরুল ইসলাম। বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফিরে খাবার খেতে বসেন তিনি। এ সময় হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও বোমা বর্ষণ হতে থাকলে খাবার শেষ না করেই ফের যেতে চান মঞ্জুরুল।

স্ত্রী আবারও বাধা দেন। এবারও স্ত্রীর বাধা উপেক্ষা করে বাসা থেকে বের হয়ে যান তিনি। এর ১০ মিনিট পর স্ত্রীর কাছে খবর আসে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে উন্নত চিকিৎসার অভাবে ওই দিনই মারা যান তিনি।

মঞ্জুরুল ইসলাম রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের জুয়ান গ্রামের এনছের আলীর ছেলে। দুই স্ত্রী মিলে চার সন্তানের জনক ছিলেন তিনি। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর সেই স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হয়েছে। প্রথম স্ত্রীর পক্ষের দুই সন্তান তাদের মায়ের সঙ্গেই থাকে। জীবিকার তাগিদে দুই বছর ধরে ঢাকার গাজীপুরে বড়বাড়ি জয়বাংলা রোডে দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।

মঞ্জুরুলের দ্বিতীয় স্ত্রী রাহিমা বেগম বলেন, সেদিন তিনি তার স্বামীকে বাইরে যেতে অনেক নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি শোনেননি। তার স্বামী তাকে বলেছিলেন, আমার সন্তানরাও তো একদিন ওদের মতো ছাত্র হবে। আজকে হাজার হাজার ছাত্রকে তারা মারছে। ওরা আমার সন্তানের মতো। যাই এই বিপদের সময় যদি ওদের একটু সাহায্য করতে পারি। আর আমি যদি মারাও যাই তুমি মনে কিছু রেখো না। মরলে মনে করবে আমি শহীদ হয়েছি। এ কথা বলে তিনি বাইরে যান। তার ১০ মিনিট পর রাহিমা বেগম শোনেন তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

খবর পেয়ে প্রথমে জয়দেবপুর হাসপাতালে যান রাহিমা বেগম। সেখানকার ডাক্তাররা বলেন, মঞ্জুরুলকে ঢাকায় নিয়ে যেতে। সেখান থেকে উত্তরার এক হাসপাতালে গেলেও টাকা না থাকায় তার চিকিৎসা হয়নি। পরে আরেক হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান মঞ্জুরুল।

রাহিমা বেগম আরও বলেন, তার শ্বশুর ও বাবা ভূমিহীন। ঘটনার পর থেকে তিনি তার বাবার বাড়িতেই থাকছেন। বৃদ্ধ বাবা সরকারি বাঁধের রাস্তায় থাকেন। স্বামীর অকাল মৃত্যুতে সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছেন তিনি। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভীষণ চিন্তিত। তিনি সবার কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।

মঞ্জুরুলের পিতা এনছের আলী বলেন, তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। মঞ্জুরুল তার প্রথম সন্তান। আন্দোলনে গিয়ে তার ছেলে মারা যায়। তিনি সরকারের কাছে এ ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবি করেন।

স্থানীয় ছাওলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাজির হোসেন বলেন, মঞ্জুরুলের মৃত্যুতে তার স্ত্রী, সন্তানরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাকে যেন শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয় এবং তার পরিবারের দিকে সরকার দৃষ্টি রাখে- এ দাবি জানান তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভোট দিয়ে শিক্ষার্থী বললেন, ‘ঈদের আনন্দ লাগছে’

বাংলাদেশে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে ‘অভিবাসন ম্যানুয়াল’ প্রকাশ করল আইওএম 

নিখোঁজের ১৫ দিন পর মরুভূমিতে মিলল সবুজের মরদেহ

মাইলস্টোনে নিহত পরিবারের পাশে থাকবেন তারেক রহমান : আমিনুল হক 

গণতন্ত্রের পথে নতুন যাত্রা শুরু করতে চাই : ব্যারিস্টার অসীম

ইলিশ রক্ষা অভিযানে গিয়ে অস্ত্র খোয়ালেন আনসার সদস্য

ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে সোবহানা-ফাহিমার উন্নতি

মিরপুর অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেবে জামায়াত

 অনুপমের বন্ধুত্বের উষ্ণ স্বীকৃতি পেলেন জিৎ

ভাবিকে হত্যার ১০ বছর পর চাচার হাতে এবার ভাতিজি খুন

১০

আজ থেকে নতুন দামে স্বর্ণ বিক্রি শুরু, ভরি কত

১১

হঠাৎ হাসপাতালে ভর্তি হানিয়া আমির

১২

২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করল আরও ৫ দেশ

১৩

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

১৪

রান্নায় মরিচ বেশি হলে যা করবেন

১৫

আজ ঢাকার আবহাওয়া যেমন থাকবে

১৬

নেইমারকে পেছনে ফেলে মেসির বিশ্বরেকর্ড

১৭

জবাব দিলেন সোনাক্ষী

১৮

অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিবারকে এক লাখ করে টাকা দেবে বিএনপি

১৯

চাকসুর ভোটগ্রহণ শুরু, ১০ মিনিটে দিতে হবে ৪০ ভোট

২০
X