কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শ্বশুরবাড়িতেও ঠাঁই হলো না শহীদ নূর আলমের স্ত্রী খাদিজার

শহীদ নূর আলমের স্ত্রী খাদিজা খাতুন। ছবি : সংগৃহীত
শহীদ নূর আলমের স্ত্রী খাদিজা খাতুন। ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে শহীদ হয়েছেন নূর আলম। ডান চোখে গুলি লেগেছিল তার। এদিকে বিয়ের প্রথম বছর না পেরোতেই খাদিজা হারালেন তার স্বামীকে। এমনকি শ্বশুরবাড়িতেও ঠাঁই হলো না তার। আর নবজাতক সন্তান বঞ্চিত হলো পিতার প্রথম স্নেহের পরশ থেকে।

চিকিৎসক জানিয়েছেন, নবজাতক আব্দুল খালেক হৃদরোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। স্বামী হারানোর শোক আর সন্তানের অসুস্থতায় দিশেহারা এখন খাদিজা খাতুন (১৯)। শহীদ নূর আলম (২২) কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মোল্লা পাড়া গ্রামের ভ্যানচালক মো. আমীর হোসেন ও পোশাক শ্রমিক নূর বানু বেগম দম্পতির দুই পুত্রের মধ্যে বড়। ছোট পুত্র নূর জামাল (১৪) পেশায় রাজমিস্ত্রি। নূর আলম স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার গাজীপুর চৌরাস্তা সংলগ্ন তেলিপাড়া গ্রামে। গত ২০ জুলাই বাসা থেকে বের হয়ে কাজে যাওয়ার পথে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মিছিলের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন তিনি।

নূর আলমের স্ত্রী মোছা. খাদিজা খাতুন বলেন, ‘২০ জুলাই সকালবেলা উঠে আমার স্বামী কাজের উদ্দেশ্যে বাইরে যায়। দুপুর ১টার দিকে লোকমুখে শুনি আমার স্বামী গুলিতে মারা গেছে। দৌড়ে গিয়ে দেখি আমার স্বামীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যাই। হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে ওই দিন রাতেই স্বামীর মরদেহ নিয়ে গ্রামে চলে আসি।’

জানা যায়, মোছা. খাদিজা খাতুন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মুন্সীপাড়ার কাচ্চির গ্রামের বাসিন্দা মো. নন্দু মিয়া (৬৫) ও সামিনা বেগম (৫৮) এর তৃতীয় সন্তান। নূর আলম ও খাদিজার বিয়ে হয় ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবরে। তারপর থেকেই তারা ঢাকা-গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকার তেলিপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন। নূর আলমের মৃত্যুর দুই মাস পর ২২ সেপ্টেম্বর এই দম্পতির প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ ম্লান হয়ে গেছে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে।

স্বামীর মৃত্যুশোকে দিশেহারা অন্তঃসত্ত্বা খাদিজা খাতুনের জায়গা হয়নি শ্বশুরবাড়িতেও। নূর আলমের মৃত্যুর দেড় মাস পরে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়ই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন শ্বশুর-শাশুড়ি। হতদরিদ্র বৃদ্ধ পিতার একমাত্র পুত্র ঈমান আলী (১৪) নবম শ্রেণির ছাত্র। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে। সেখানে নবজাতকসহ বিধবা কন্যার বাড়ি ফিরে আসায় গভীর সংকটে পড়েছেন তারা।

খাদিজা জানান, মামার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে বাবার বাড়িতে কোনোরকমে দিনাতিপাত করছেন। কোলের শিশুটিও অসুস্থ। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আল আমিন বলেছেন, শিশুটি হৃদরোগে আক্রান্ত। দিশেহারা খাদিজা অভিযোগ করেন, নূর আলমের মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন থেকে যেসব অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে সবই নিয়েছে নূর আলমের পিতা মো. আমীর হোসেন। উপরন্তু এই টাকার ভাগ খাদিজা খাতুনকে দিতে হবে বলে তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

শোক ও উৎকণ্ঠায় দিশেহারা খাদিজা বলেন, স্বামী হারানোর শোক যে কি যার স্বামী হারিয়েছে সেই জানে। এতকিছুর মাঝে আমি আরও বড় আঘাত পেয়েছি আমার স্বামী মারা যাওয়ার ৪৪ দিনের মাথায় আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে বিনা কারণে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। গর্ভাবস্থায় আমার শ্বশুর রাতের বেলা আমাকে হাত ধরে বের করে দেন। আমি পাশের বাড়িতে রাতে থেকে আমার বাবাকে ফোন দেই। পরের দিন বাবা গিয়ে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর ছেলের জন্ম হয়েছে। তার বয়স ১৫ দিন হতে চলল। তবু ওরা আমার সন্তানের খোঁজ নিতে আসে নাই। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার শ্বশুরের কাছে আর্থিক সহযোগিতা আসছে। সে সব সহযোগিতার টাকার খবর যাতে আমি না শুনি এ কারণে আমার শ্বশুর পরিকল্পিতভাবে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। তার ওপর শিশু সন্তানের অসুস্থতায় কোথায় যাব, কী করব ভেবে পাই না। আমার ভবিষ্যৎ এখন নূর আলমের রেখে যাওয়া আমানত সন্তান আব্দুল খালেক। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়েও খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। আমি আমার ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। আমার সন্তানের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা ও সাহায্য প্রার্থনা করছি।’

নূর আলমের বাবা মো. আমীর হোসেন বলেন, আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে নূর আলমকে হারিয়ে আমরা ভালো নেই। সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা আসছে। এ পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা ৫০ হাজার টাকা, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ২ লাখ ৫ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে আশ্বাস ও সহযোগিতা পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

নূর আলমের স্ত্রী খাদিজা খাতুনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমীর হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার নাতি ও ছেলের বউ খাদিজা বর্তমানে ওর বাবার বাড়ি আছে। তার সঙ্গে আমরা কোনো ঝগড়া বিবাদ করি নাই। সে নিজ ইচ্ছায় ওর বাবার বাড়ি চলে গেছে। এলাকায় এসে খোঁজ নিতে পারেন।’

এ বিষয়ে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন মো. নূর আলম। আমি তার পরিবারের নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। নূর আলমের স্ত্রীর সঙ্গে তার বাবা মায়ের কোনো ঝগড়া বিবাদ হয়েছে কি না আমি জানি না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়ে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা

চট্টগ্রামে শ্রমিক সমাবেশ / ‘সরকারের বোধোদয় না হলে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে’

স্কুলে ভর্তিতে মাউশির জরুরি বিজ্ঞপ্তি

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তিন ম্যাচে বাফুফের আয় ৪ কোটি

খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির দোয়া মাহফিল

গণভোটের মাধ্যমে ভোটের চরিত্র পাল্টাতে হবে : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

কাপ্তাই লেকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ নিধন, সরঞ্জামসহ নৌকা জব্দ

ওয়ার্ল্ড পাইলস ডে : অ্যালায়েন্স কলোরেক্টাল-বায়োফিডব্যাক সেন্টারের সচেতনতা সভা

৭৫ রানে অলআউট হয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের হার

এক নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি

১০

জরায়ুমুখের ক্যানসার কেন হয়, কারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন?

১১

রাজশাহীর রাজবাড়ি / ইতিহাসের দেয়াল ভাঙা থামাল প্রশাসন

১২

বৃহস্পতিবার প্রকাশ পাবে ‘এই অবেলায়-২’

১৩

যন্ত্রপাতি পৌঁছাতেই বিক্ষোভ, বুড়ি তিস্তায় বাড়ছে সংঘাতের শঙ্কা

১৪

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, আদালতকে বললেন তনি

১৫

আইসিসি থেকে শাস্তি পেলেন ভারতীয় পেসার

১৬

পাকিস্তানে পুলিশের গাড়িতে আইইডি বিস্ফোরণ, নিহত ৩

১৭

পাচারের অর্থ ফেরত আনার সক্ষমতা বর্তমান সরকারের নেই : রেজা কিবরিয়া

১৮

গোলাপী বলের টেস্টে কামিন্সের খেলা নিয়ে রহস্য

১৯

এবার ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন জয়

২০
X