কক্সবাজারের পেকুয়ার উজানটিয়া বহুমুখী কমিউনিটি সেন্টারটি (আশ্রয়কেন্দ্র) সংস্কারের অভাবে দিন দিন বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। চরম ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় দুর্যোগ ও মহামারিতে জীবন বাঁচাতে যেখানে আশ্রয় নেওয়া হয়। আর সেই আশ্রয়কেন্দ্রটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ। ছাদ ও পিলার ভেঙে পড়ছে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকার লোকজন ওই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি ও জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরে ১৯৯৫ সালে কারিতাস ইতালিয়ান অনুদানে কারিতাস বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রটি নির্মাণ করে। নির্মাণের পর আর সংস্কার করা হয়নি। ২৭ বছরের মাথায় সংস্কারের অভাবে এ ভবনের ছাদ ও পিলারে ফাটল। এমনকি ভেঙে যাচ্ছে দরজা ও জানালাও। সংস্কারের অভাবে অকালেই ব্যবহার উপযোগিতা হারাচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রটি। ফলে দুই এলাকার মানুষ দুর্যোগের সময় আশ্রয় সংকটে পড়বে। শুরু থেকে ওই আশ্রয়কেন্দ্রে কারিতাসের পরিচালনাধীন একটি স্কুল ছিল। ২০১৬ সাল থেকে স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো সংস্কার হয়নি। বর্তমানে এ আশ্রয়কেন্দ্রটিতে গাঁজাসহ মাদকসেবনের আস্তানা ও কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন : ঝুঁকি মোকাবিলার 'শক্তি'ই ঝুঁকিতে
পেকুয়ার চর এলাকার তৌহিদুল ইসলাম হিমেল বলেন, এ আশ্রয়কেন্দ্রটি ১৯৯৫ সালে নির্মিত হয়েছে। দুই ওয়ার্ডের দুইটি আশ্রয়কেন্দ্র থাকলেও দুই ওয়ার্ডের প্রায় ২০০ পরিবার এ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করে। ১৯৯৭ সালে আমরা সপরিবার এ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করেছিলাম। বর্তমানে এ আশ্রয়কেন্দ্রের অবস্থা দেখে আমি হতভম্ব। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রের সংস্কার করা হোক।
স্থানীয় এমইউপি ওসমান গনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় এ আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শত শত মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করে। এ আশ্রয় কেন্দ্র সংস্কারের অভাবে ভেঙে যাওয়ার অবস্থা। এ আশ্রয়কেন্দ্র হচ্ছে কারিতাসের পরিচালনাধীন, তবুও সরকারিভাবে অনুদানের জন্য আমি ও চেয়ারম্যান কাজ করছি।
আশ্রয়কেন্দ্রের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ কারিতাসের পরিচালনাধীন স্কুল ছিল এ ভবনে। তখন আমি সভাপতি ছিলাম। তখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। সরকারিভাবে সংস্কার করা না হলে এটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরিণত হবে। আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে সংস্কারের জন্য জোর আবেদন জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন : 'গরিব বলে কেউ আঙ্গো খবর নেয় নাই'
কারিতাস এরিয়া ম্যানেজার কামাল বলেন, ১৯৯৫ সালে ইতালির অনুদানে তৈরি করা হয় এ আশ্রয়কেন্দ্র। কিন্তু এরপর এলাকায় কমিটি করে আমরা তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। এখন এটা জনগণের সম্পদ, কারিতাসের কিছু নেই। আর সেই অনুদান শেষ। সরকারিভাবে সংস্কার করতে পারবে। তবে আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই তিন মাস কারিতাস থেকে ১৯৯৫ এরপরে তৈরি করা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করবে। যদি সংস্কারের করার মতো পরিবেশ থাকে এবং বাংলাদেশ কারিতাস যদি ডোনার পাই তবে সংস্কার হতে পারে। স্থানীয় চেয়ারম্যান তোফাজল করিম জানান,আশ্রয়কেন্দ্রটি সংস্কার করতে ইউএনও ম্যামকে পরিদর্শন করিয়েছিলাম, কিন্তু এখনো কোনো কাজ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, কারিতাসের নির্মিত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রটি আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা জানান, আশ্রয়কেন্দ্রটি পরিদর্শন করা হয়েছে। সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন