দুই বছর আগে পবিত্র ঈদুল আজহায় প্রশাসনের পক্ষে কোরবানির গরু জবাই করা হয়। কেউ আবার আত্মীয়স্বজনদের দেওয়া কুরবানির গোশত দিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করে। কেউ সাধ্যের মধ্যে নতুন জামাকাপড় কিনেছিল। কেউ আবার স্বজনকে দাওয়াত করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। একদিকে তিন দিনের টানা বৃষ্টি, জলাবদ্ধতায় নাকাল অবস্থা অন্যদিকে কোরবানি দিতে না পারায় লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা প্রায় সাড়ে ৪শ পরিবারে কষ্ট নিয়ে এবারের ঈদ কাটে। সরকারি-বেসরকারিভাবে কেউ সহযোগিতা করেননি তাদের।
শুধু রায়পুরের শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী খোকনই তার ইউনিয়নের উদমরা গ্রামের আশ্রায়ণের ৬৯ পরিবারের জন্য লাখ টাকার গরু কোরবানি দেন।
মিয়ারহাট আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সবার মুখে কষ্টের ছাপ। কোনো রকমে দুই বেলা খেয়ে কঠিন সময় পার করছে বানভাসী ও দরিদ্র মানুষ। ঈদ উদযাপনের কোনো চিন্তা কারও মাথায় নেই।
দিনমজুর মরন আলী জানান, ‘৪৫ পরিবার থাকি এই আশ্রয়কেন্দ্রে। টানা বৃষ্টিতে পুরো কেন্দ্রই জলাবদ্ধতায় ভইরা গেছে। ঈদে আমরা গরিব বইলা কেউ আঙ্গো খবর নেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে গোশত খাইলেও এবার আর হয়নি। বাড়িত থাকলে গ্রামের লোক কোরবানির গোশত দিত। আশ্রয়কেন্দ্রে কে দিব?’
আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা হনুফা বলেন, ‘শিশুদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদ করতে হবে—এমন কথা কখনো ভাবিনি। নদীভাঙনে ঘর হারিয়ে বেড়িবাঁধ থেকে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। নিজে পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছি না। এসব যন্ত্রণার মধ্যে আর ঈদের কথা ভাবছি না।
হাজিমারা আশ্রয়কেন্দ্রের সভাপতি দুলাল সরদার ও চাঁন মিয়া বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রে তিন বছর আগে প্রশাসন থেকে গরুর গোশত দিয়েছিল। গত বছর মিয়ারহাট আশ্রয়ণ কেন্দ্রে একটা গরু জবাই করেছিল। এই ঈদে প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা খবর নেয় নাই।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাশ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল ইকবাল ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, রায়পুর উপজেলার বামনী ইউপিতে দুই, চরমোহনা ইউপিতে এক, চরআবাবিল ইউপিতে এক এবং উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী ইউপিতে মেঘনা নদীর পাড়ে চার জায়গায় আশ্রয়ণ ও আবাসন কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৪শ পরিবার বসবাস করছেন।
মন্তব্য করুন