ময়মনসিংহ ব্যুরো
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এক ব্যাগে স্যালাইন মিশিয়ে তিন ব্যাগ রক্ত বানাতেন তারা

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রক্ত চুরির সময় দুজন গ্রেপ্তার। ছবি : কালবেলা
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রক্ত চুরির সময় দুজন গ্রেপ্তার। ছবি : কালবেলা

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রক্ত চুরির সময় দুজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এক ব্যাগ রক্তে স্যালাইন মিশিয়ে তিন ব্যাগ রক্ত বানাতেন তারা।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্তের ব্যাগ চুরির সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- তারাকান্দা উপজেলার গোয়াইলকান্দি গ্রামের আবদুর রহমান খানের ছেলে মো. নাঈম খান পাঠান (৩৮) ও ময়মনসিংহ সদরের আকুয়া মড়ল বাড়ি এলাকার মিন্টু চন্দ্র দের ছেলে তুষার চন্দ্র দে ওরফে মো. আবদুল্লাহ (২২)। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মো. সেলিম মিয়া বাদী হয়ে শনিবার রাতে তাদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, সরকারি হাসপাতাল থেকে রক্ত চুরি করে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা জানায়, বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে তারা সংগ্রহ করে বিক্রি করত। আমরা যে রক্তগুলো গ্রহণ করছি তা কোথা থেকে, কীভাবে আসছে তা জানা যায়নি। এ বিষাক্ত রক্ত মানুষের শরীরে গ্রহণের ফলে মানুষের জীবনের ক্ষতি হতে পারে।

ওসি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, এটি বিশাল একটি চক্র। নগরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে তারা মানুষের ক্ষতি করছে। মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে এমন ব্যক্তিদের রক্ত সংগ্রহ করে, সরকার অনুমোদিত ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত না নিয়ে তারা ভুয়া ব্লাড ব্যাংকের কথা বলে এসব রক্ত বিক্রি করে। এক ব্যাগ রক্তে স্যালাইন মিশিয়ে তিন ব্যাগ রক্ত বানাত।

ওসি আরও বলেন, এই চক্র নির্মূল করা না গেলে মানুষের জীবনের অনেক ক্ষতি হতে পারে। আপাতত চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি, বাকিদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে রক্ত চুরি করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। এ চক্রের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

জানা যায়, মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করে বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে রক্ত বিক্রি করে এ সিন্ডিকেট। তাদের নেই কোনো সরকারি ট্রেনিং বা লাইসেন্স। তারা রক্তে স্যালাইন মিশিয়ে দুই ব্যাগ থেকে তিন বা চার ব্যাগ রক্ত বানাতেন। ভুয়া ক্রসমেচিং রিপোর্ট বানিয়ে নিজেরাই রোগীদের শরীরে এই বিষাক্ত রক্ত পুশ করতেন। এতে রোগীরা সুস্থ হওয়ার বদলে মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়তেন।

অথচ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এসবের কিছুই জানেন না তারা। পুলিশের হাতে ‘বিষাক্ত রক্ত’ সিন্ডিকেটের দুজন গ্রেপ্তারের পর তাদের অপতৎপরতা সামনে আসে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক, কমিউনিটিভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্লাড ব্যাংক, ময়মনসিংহ ব্লাড ব্যাংক অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন সেন্টার, নিরাপদ ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিস সেন্টার- এই চারটি ব্লাড ব্যাংক অনুমোদিত। কিন্তু কয়েকটি নামসর্বস্ব ব্লাড ব্যাংকের ক্রসম্যাচিং রিপোর্ট রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রেটিনা ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার, সেইফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিস সেন্টার, নির্নভ ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিস সেন্টার, সেইফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার, জনতা ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিস সেন্টার।

কিন্তু সেগুলোতে চরপাড়া ও মাসদাকান্দা ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ নামে কোনো ব্লাড ব্যাংক নেই বলেও জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়।

নিরাপদ ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিস সেন্টারের পরিচালক আব্দন নূর বলেন, নগরীতে অনেকগুলো অবৈধ ব্যাংক পরিচালিত হয়। যেগুলোর সঠিক কোনো ঠিকানা কাগজে ব্যবহার করে না। তারা সুবিধামতো বিভিন্ন ক্লিনিকে ব্লাড ট্রান্সফিউশন করে রোগীদের কাছে বিক্রি করে। তারা স্যালাইনের মাধ্যমে এক-দুই ব্যাগ রক্তকে তিন-চার ব্যাগ রক্ত বানিয়ে বিক্রি করে। নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। দীর্ঘদিন এ চক্রটি তৎপরতা চালালেও দেখভালকারী কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. ফয়সল আহমেদ বলেন, চক্রের তৎপরতা সম্পর্কে আমাদের জানা ছিল না। নগরে নিবন্ধিত তিনটি ব্লাড ট্রান্সমিউশন সেন্টার রয়েছে। এসব সেন্টারের বাইরে থেকে যদি কেউ রক্ত নিয়ে যায় তাহলে সেই রক্ত রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো উচিত নয়। কারণ, রোগী ভালো হওয়ার জন্য রক্ত দিতে গিয়ে এইডস, হেপাটাইটিস-বিসহ বিভিন্ন মরণঘাতী রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে বেশি সচেনতন হতে হবে, তারা সচেতন হলেই এ সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন খান বলেন, একজন রোগীর কাছ থেকে এক ব্যাগ রক্তের জন্য ২২০০ টাকা নিলেও রক্ত দিচ্ছিল না। পরে বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তৎপরতা শুরু করলে চক্রের সদস্যরা আটক হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সারা দেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৬৬২

নির্মাণাধীন নভোথিয়েটার ও বিটাক দখলে নিলেন ববি শিক্ষার্থীরা

আইভরি কোস্ট  / প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াতে চান ৬০ জন

রাজধানীতে আজ কোথায় কোন কর্মসূচি

গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘের

আজ আপনার ভাগ্যে কী আছে, দেখে নিন রাশিফলে

২৮ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২৮ আগস্ট : টিভিতে আজকের খেলা

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১০

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প কর্মসূচি দিয়ে জবি ছাত্রীসংস্থার আত্মপ্রকাশ

১১

২৮ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১২

২০৭ কোটি টাকার ঋণ খেলাপী / আসিফ এপারেলসের এমডিসহ ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

১৩

শহীদ আলভীর অসুস্থ পিতার পাশে আমিনুল হক

১৪

বুজতেছি না এ সরকার কি আমাদের, নাকি কাদের: ইব্রাহীম

১৫

কবি নজরুল ছিলেন মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত : ডা. ইরান

১৬

শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু মঞ্চ ও পোশাক কর্মশালা

১৭

এবার চতুর্থ সারির ক্লাবের কাছে হেরে ম্যানইউর বিদায়

১৮

ড. মাসুদের প্রচেষ্টায় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেলো ৩ ইউনিয়নের মানুষ

১৯

বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশ স্পিনার

২০
X