ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৫৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মায়ের যুদ্ধে মাসুমার স্বপ্নপূরণ, তবু জাগে শঙ্কা

মায়ের সঙ্গে মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া মাসুমা আক্তার হিরা। ছবি : কালবেলা
মায়ের সঙ্গে মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া মাসুমা আক্তার হিরা। ছবি : কালবেলা

চার বছর বয়সে বাবাকে হারান মাসুমা আক্তার হিরা। উপার্জনক্ষম একমাত্র মানুষটিকে হারিয়ে পুরো পরিবারটির নির্ভর হয়ে ওঠে তার মায়ের ওপর। মায়ের টিউশনির আয়ে কোনোমতে চলত তাদের পরিবার। নিজের আত্মবিশ্বাস, অভাব-অনটন আর সব দারিদ্র্যকে জয় করে এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন মাসুমা। এমন খবরে খুশির চেয়ে পরিবারটির পিছে তাড়া করছে পড়াশোনার খরচের চিন্তা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের বরুনাগাঁও গ্রামের রহিমা খাতুনের মেয়ে মাসুমা। ৪ বোনের মধ্যে তৃতীয়। পঞ্চগড়ের রহিমুন্নেসা দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিলে জিপিএ-৫ ও ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে এবারে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন যশোর মেডিকেল কলেজে।

স্বামী হারানোর পরে চার মেয়েকে নিয়ে জীবনযুদ্ধ করেছেন মাসুমার মা। অভাব-অনটন আর ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে চালিয়েছেন জীবন। মায়ের স্বপ্ন পূরণে নিজেও টিউশনি করাতেন মাসুমা। হার না মেনে মা-মেয়ের এমন সফলতায় খুশি প্রতিবেশী ও স্বজনরা। মাসুমাকে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার আহ্বান এলাকাবাসীর।

মাসুমার চাচা হযরত আলী জানান, মাসুমার কৃতিত্বে তারা সবাই বিস্মিত। অনেক কষ্ট করেছে মেয়েটি। পড়ালেখার খরচ চালানো অনেক কষ্টের ছিল তারপরেও হার মানে নাই মাসুমা। তাদের বংশের নাম উজ্জ্বল করবে এটাই তাদের প্রত্যাশা। এখন তার পড়ালেখার খরচ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরা দেখে তাহলে ভালো হয়।

প্রতিবেশী আসিক ইসলাম জানান, মাসুমার পরিবার অনেক কষ্ট করে চলে। তাদের বাড়িতে পুরুষ মানুষ নেই। তার মা কষ্ট করে পরিবারের খরচ চালিয়েছে, মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়েছে। মাসুমা গোবরে পদ্মফুলের মতোই। তার সফলতায় সকলেই আনন্দিত।

মেডিকেলে চান্স পাওয়া মাসুমা আক্তার হিরা বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পরে পুরুষবিহীন পরিবারকে নিয়ে নানা কথা বলেছে অনেকে। মায়ের লালিত স্বপ্ন বুকে নিয়ে পথ চলেছি। পড়ার টেবিলে সবসময় রাখতাম ডাক্তারের স্টেথোস্কোপ ও অ্যাপ্রোন। পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পরিবারের পাশে থেকেছেন শিক্ষকরাও। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে মানবিক ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন আমার।

মাসুমার মা রহিমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পরে পরিবারের হাল ধরেছি। টিউশনের উপার্জনে পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। মেয়ের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারি নাই কখনো। তবে আশা ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। সব বাধা পেরিয়ে মেয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সরকার পাশে থাকলে আমার মেয়ে একদিন মানবিক ডাক্তার হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা মাসুমার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বলেন, জেলা প্রশাসক মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে সবসময় ছিল ও থাকবে। আমরা মাসুমার ভর্তির বিষয়ে সহযোগিতা করব। সেই সঙ্গে তার সকল প্রকার খোঁজখবর রাখব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এনসিপির প্রেস বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানাল ইশরাকের আইনজীবী 

ফিলিস্তিনিদের জন্য মালয়েশিয়াস্থ চট্টগ্রাম সমিতির অনুদান

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ / ভারতের প্রতি সমর্থন, তবে পাকিস্তান প্রসঙ্গে প্রমাণ চায় যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু ইস্যুতে অপপ্রচারে ব্রিটিশ এমপিদের উদ্বেগ 

আজ নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ

এআই আর্মস রেস  / ইসলামি দেশগুলোকে নিয়ে বসছে ইরান

কেউ গোপনে ভালোবাসছে? জেনে নিন তার ৭টি লক্ষণ

রক্তাক্ত গাজা : ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৩৫

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট

ইরানের জ্বালানি খাতে নতুন নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের

১০

দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় আজ শীর্ষে ঢাকা

১১

বন্ধুকে অপহরণ, মুক্তির শর্তে স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব

১২

‘প্রভাব খাটিয়ে’ হাটের ইজারা পেলেন বিএনপি নেতারা

১৩

ফুলে সাজানো রিকশায় প্রধান শিক্ষকের বিদায়

১৪

মুক্তি পেয়েই জেলগেটের সামনে ফের আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৫

ইসরায়েলের গুপ্তচরকে ফাঁসিতে ঝুলাল ইরান

১৬

পাকিস্তানে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার আশঙ্কা

১৭

ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার বিমান হামলা

১৮

ঢাকার আবহাওয়া আজ কেমন থাকবে

১৯

বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

২০
X