মোবাইলে ধারণ করা একটি অনৈতিক কাজের ভিডিওই (বলৎকার) কাল হয়েছে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিন আহমদের।
মোবাইল মেমোরিতে জমা রাখা ভিডিওটি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বারবার বিছানা সঙ্গী করার অপচেষ্টার হাত থেকে রক্ষা পেতে হোটেল কক্ষে সাইফ উদ্দিকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। ঘাতক হিসেবে সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার হওয়া আশরাফুল ইসলাম (১৮) এমন দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আশরাফুলের বরাত দিয়ে এসব কথা তুলে ধরেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম।
এর আগে সোমবার (২০ আগস্ট) রাতে কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড় এলাকার আবাসিক হোটেল সানমুনের ২০৮ নম্বর কক্ষে পৌর আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিন আহমেদকে ফিল্মি স্টাইলে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তারই বাইক নিয়ে পালিয়ে আত্মগোপনে যাওয়ার সময় মাঝ রাতেই টেকনাফের হোয়াইক্যং থেকে ওই তরুণকে আটক করে পুলিশ। তার দেখানো স্থান হতে নিহতের মোটরসাইকেল, মানিব্যাগ ও মুঠোফোন জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার আশরাফুল ইসলাম কক্সবাজার পৌর শহরের ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা। তারা পুরোনো রোহিঙ্গা বলে পরিচিত।
পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হোটেল কক্ষ থেকে সাইফ উদ্দিনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করার পর সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে কক্ষ থেকে বের হওয়া তরুণকে শনাক্তে সব পদ্ধতি ব্যবহার করে পুলিশ। সন্দেহজনক সবাইকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত হত্যাকারী এবং হত্যার কারণ উদঘাটনে প্রচেষ্টা চালানো হয়। কয়েকটি চৌকস টিমকে বিভিন্নভাবে কাজে নামানো হয়।
তিনি বলেন, আমাদের মাঝে খবর আসে, আত্মগোপনে যেতে হত্যাকারী আশরাফুল রাতে একটি বাসে টেকনাফ যাচ্ছিল। হোয়াইক্যং পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পর তারা চেকপোস্ট বসায়। অবশেষে পালকি নামে এক বাসে তল্লাশি চালিয়ে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই মো. রোকনুজ্জামান আশরাফকে আটক করে।
এসপি আরও জানায়, আশরাফ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়- নিহত সাইফ উদ্দিনের দুঃসম্পর্কের শ্যালক হিসেবে পরিচিত কায়সার হামিদ নয়ন ও নয়নের আরেক বন্ধু নয়নের মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। ঘটনার দিন (২০ আগস্ট) সাইফ উদ্দিন তার বাইকে করে আশরাফুলকে নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন। বিকেল ৪টার দিকে শহরের বড়বাজার হতে বাংলা মদ (চোলাই মদ) ও পেয়ারা কিনে হোটেল সানমুনে যান সাইফ উদ্দিন ও আশরাফ। তা পান করে একান্তে সময় কাটানোর পর আশরাফকে নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে করে গোলদীঘিপাড় এলাকায় নামিয়ে দেন।
‘ঘণ্টা দুয়েক পর আবারও সাইফ উদ্দিন তার সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর আগ্রহ প্রকাশ করে আশরাফকে হোটেলে ডাকেন। আসতে আপত্তি জানালে আশরাফের সঙ্গে অনৈতিক কাজের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায় সাইফুদ্দিন। আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও ও রুমে এসে তার অনৈতিক কাজের ভিডিওটি ডিলেট করে দিতে জোরাজুরি শুরু করে আশরাফ। এ নিয়ে দুজনের মাঝে বাগবিতণ্ডা হলে একপর্যায়ে আশরাফের গলা চেপে ধরে সাইফুদ্দিন। রক্ষা পেতে পকেটে থাকা ছুরি বের করে সাইফ উদ্দিনকে উপর্যুপরি আঘাত করা হলে নেশাগ্রস্ত সাইফুদ্দিন বিছানায় পড়ে যান। এরপর তাকে মাথা ও পাসহ শরীরের নানা স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয়। একপর্যায়ে সাইফুদ্দিনের গুঙানি বন্ধ করতে বিছানার চাদর নিয়ে গলায় পেঁচিয়ে দেয় আশরাফ। আবার উঠে যেন আক্রমণ করতে না পেরে সেজন্য প্যান্টের বেল্ট খুলে হাত দুটি বেঁধে ফেলে। মৃত্যু নিশ্চিত হলে জামায় লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করেন। পরে সাইফ উদ্দিনের মুঠোফোন ভেঙে ফেলেন এবং মানিব্যাগ ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে সুবিধামতো সময়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় সাইফ উদ্দিনের মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান আশরাফ।’ এসপি জানান, আটকের পর তার দেখানো ড্রেইনের জলা থেকে মুঠোফোন, মানিব্যাগ ও হত্যায় ব্যবহার করা ছুরিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্য মতে, সদর উপজেলার খুরুশকুল হতে উদ্ধার হয় এফজেড ভার্সন-৩ মডেলের মোটরসাইকেলটিও।
এসপি মাহফুজ জানান, এ ঘটনায় মামলা এখনো প্রক্রিয়াধীন। ঘটনার পেছনে আর কি কি আছে, কারা সাইফ উদ্দিনের এসব কাজে সহযোগী ছিল তাদের শনাক্তে কাজ চলছে। কারা কারা সাইফুদ্দিনের মতো এমন নৈতিক স্খলনজনিত কাজে জড়িত তাদের শনাক্তে কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, গত ২১ আগস্ট সকালে কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড়ের হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সাইফ উদ্দিন কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ ঘোনার পাড়ার সাবেক আনসার কমান্ডার আবুল বশিরের ছেলে। তিনি এলাকার কাদেদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের গত কমিটির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। হত্যার এক দিনের মাথায় হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মন্তব্য করুন