কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে সাত বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন আলী আক্কাছ (৩০) নামের এক যুবক। এর পর থেকে কখনো জমি বিক্রি করে, আবার কখনো এলাকাবাসী থেকে টাকা চেয়ে আলী আক্কাছের চিকিৎসা করেন পরিবার।
নাঙ্গলকোট জামান ক্লিনিক ও মইডার হোমসেও তার চিকিৎসা করেন পরিবার। চিকিৎসায় কিছুদিন ভালো থাকে। আবার শুরু হয় তার পাগলামি। ধূমপান করা তার নেশায় পরিণত হয়েছে। সুযোগ পেলে বাড়ির পাশের নাঙ্গলকোট-ঢালুয়া সড়কে তিনি চলে যান। স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের দেখলে আক্রমণ করার পাশাপাশি পথচারীদেরও বিভিন্ন সময়ে মারধর করেন। যার ফলে প্রায় সময় তিনি হাত-পায়ে শিকল বন্দি থাকতে হয়।
তিনি উপজেলার ঢালুয়া ইউপির বদরপুর আকমত আলী বেপারী বাড়ির তাজুল ইসলামের ছেলে। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না তার। এখন তার হাতে ও পায়ে শিকল পরানো অবস্থায় ঘরের ছোট্ট জীর্ণকক্ষে দিন কাটে।
পরিবারের সদস্যদের চোখের আড়াল হলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অকারণেই মানুষকে গালমন্দ ও স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের বিরক্ত ও গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় কারও কারও কাছে সিগারেটও চান তিনি। এমন অস্বাভাবিক আচরণ সামাল দিতে গিয়ে পরিবারের লোকজনকে পড়তে হয় বিপাকে। বাধ্য হয়ে তার স্ত্রীও চলে যান বাপের বাড়িতে। যা সামর্থ্য ছিল, তা দিয়ে পরিবারের লোকজন চিকিৎসা করিয়েছে। তবে অর্থের অভাবে ভালো কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না তার।
চিকিৎসকরা জানিয়েছে, ভালো মানের চিকিৎসা পেলে ভালো হয়ে যাবেন তিনি। একসময় বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে সাহায্য ও পরিবারের অর্থে চিকিৎসা করালেও এখন আর তা পারছে না।
তার বড় ভাই নুরুন নবী বলেন, আলী আক্কাছকে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে ডাক্তার দেখানো হয়। কিছুদিন ভালো ছিল। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। মেয়েদের দেখলে গালমন্দ ও গায়ে পড়তে চায়। সিগারেট পান করলে শান্ত থাকে সে।
মা হাবিয়া খাতুন বলেন, তার ছেলের মাথায় সমস্যা দেখা দিলে জায়গাজমি বিক্রি ও বিভিন্ন লোকজন থেকে সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা করান। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন আলী আক্কাছ। মেধাশক্তি ছিল ভালো। হঠাৎ করে ঘরে ঝিমিয়ে বসে থাকতে থাকতে একপর্যায়ে পাগলামি শুরু করতে থাকেন। তার হাত থেকে আমিও রক্ষা পাইনি। মহিলাদের মারধর ও গালমন্দ করে। তাই শিকল বন্দি জীবন পার করতে হচ্ছে সন্তানকে। তিনি আর চান না সন্তানের হাতে পায়ে শিকল পরানো অবস্থায়। এজন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা পারে সুস্থ করে তুলতে।
মন্তব্য করুন