চাঁদপুরের হাইমচরে পরকীয়ার জেরে ছেলে মো. আরিফ হোসেনকে হত্যার দায়ে মা খুকি বেগমসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ সময় সহযোগী দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১) ফারহানা ইয়াসমিন এই রায় দেন।
নিহত আরিফ হোসেন জেলার হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের মাছুম খান বাড়ির মিজানুর রহমান খানের ছেলে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- নিহতের মা খুকি বেগম (৪৩) ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের গাজীবাড়ির গণি গাজীর ছেলে মো. জয়নাল গাজী (২৪)। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর বিষকাটালি গ্রামের মোল্লাবাড়ির হোসেন মোল্লার ছেলে ইউছুফ মোল্লা (২৭) ও একই গ্রামের বিল্লাল মোল্লার ছেলে মাহবুব মোল্লা (২৬)।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন তার মা খুকি বেগমের সঙ্গে আসামি জয়নাল গাজীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। এ বিষয়ে মা-ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ ভালোবেসে পার্শ্ববর্তী উত্তর আলগী ইউনিয়নের মিজিবাড়ির আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে (১৯) বিয়ে করেন।
এরপর মা, ছেলে ও ছেলের বউয়ের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়াবিবাদ লেগেই থাকত। এর জের ধরে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৮ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে মা খুকি বেগম নিজ ঘরে পরকীয়া প্রেমিক জয়নাল গাজী ও সহযোগীদের দিয়ে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে পোছ মেরে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়।
পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে অভিযুক্ত খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানান, ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গিয়েছে। আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মতলব ফেরিঘাট পার হওয়ার পর সকাল ৯টার দিকে আরিফের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওইদিনই আসমা শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় হাইমচর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নুর মিয়াকে। তিনি মামলাটি দীর্ঘ এক বছর তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) বদিউজ্জামান কিরন জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। মায়ের পরকীয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটে। মামলাটি দীর্ঘ ৭ বছরের অধিক সময় চলাকালীন আদালত ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় দেন।
আসামিদের মধ্যে ইউছুফ মোল্লা প্রথম থেকে পলাতক। বাকিরা জামিনে থাকলেও রায়ের সময় সব আসামির অনুপস্থিতিতে রায় হয়। এদিন আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. জয়নাল আবেদীন।
মন্তব্য করুন