ঘুষের টাকা গুনে গুনে নেওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়া কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আব্দুছ ছালাম মন্ডলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরইমধ্যে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সোমবার (০৫ মে) রাতে মোবাইল ফোনে কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার হালদার।
রোববার (০৪ মে) দৈনিক কালবেলা অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পরে ওই অভিযুক্ত ভূমি কর্মকর্তা আব্দুছ ছালাম মন্ডলকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আব্দুছ ছালাম মন্ডল প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে কালবেলাকে বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগে প্রত্যাহারের চিঠি হাতে পেয়েছি।
এর আগে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম মণ্ডলের ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল হয়। দুই মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও মানুষের মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন একটি ভিডিও কালবেলার প্রতিবেদকের হাতেও রয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, বন্দবেড় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার অফিসের খাস কামরায় বিছানার ওপরে বসে থাকা ভূমি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম মন্ডল কোনো এক ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুষের টাকা গুনে গুনে নিচ্ছেন।
ওই ভিডিওতে ভূমি কর্মকর্তা টাকা হাতে নেওয়ার সময় বলতে শোনা যায়, বেশি করে দেন, বড় স্যারের কাছে গেছেন যহন। কাল না কলেন ১৫ দিমু।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও সূত্র ধরে বন্দবেড় ইউনিয়নের চর বন্দবেড় গ্রামের ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহেল কাফীর কাছে জানতে চাইলে তিনি টাকা লেনদেনের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
তিনি কালবেলাকে বলেন, আমার ৩ একর জমির খাজনা দিতে বন্দবেড় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যাই। ভূমি কর্মকর্তা আমার কাছে সরকারি হিসেব অনুযায়ী ১ লাখ ১২ হাজার টাকা খাজনার হিসাব দেয়। তখন আমি বলি- ২০২৪ সাল পর্যন্ত খাজনা দেওয়া আছে। এতো টাকা কীভাবে হয়। পরে ভূমি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম মন্ডল আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে ১ লাখ টাকায় নিষ্পত্তি করে দিতে চান।
তিনি আরও বলেন, দরকষাকষি করে সর্বশেষ ১১ হাজার টাকাসহ ভূমি কর্মকর্তার কাছে কয়েক কিস্তিতে মোট ৭১ হাজার টাকা প্রদান করি। কিন্তু পরে খাজনার দাখিলায় দেখতে পারি, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাত্র ১ হাজার ৫০৫ টাকা পরিশোধ দেখিয়েছেন ওই ভূমি কর্মকর্তা। বাকি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, ভূমি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম প্রতারণা করে যে টাকা আমার কাছ থেকে নিয়েছেন তা ফেরত চাই এবং এসব ঘুষ দুর্নীতির যথাযথ বিচার চাই।
ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে বন্দবেড় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে ভূমি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম মন্ডল কালবেলাকে বলেন, বক্তব্য দেওয়া লাগলে স্যারের অনুমতি নিয়ে দেব। এ কথা বলেই তিনি চেয়ার থেকে উঠে চলে যান।
এ প্রসঙ্গে রৌমারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল দিও কালবেলাকে জানান, জনগণেরও দোষ আছে। কাজ না হলে তারাও কিন্তু মাঝেমধ্যে এরকম দোষারোপ করেন। ভুক্তভোগী আমার কাছে কিংবা ইউএনও’র কাছে এসে অভিযোগ দাখিল করে প্রমাণ করুক।
মন্তব্য করুন