হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের বাসিন্দা আমিনুল হকের স্ত্রী হেনা আক্তার (৪৭)। বিয়ের পর থেকে অন্যের বাড়িতে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বাস করে কেটেছে জীবনের অধিকাংশ সময়। প্রথম ধাপে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণের ঘর পেয়ে হাসি ফুটেছিল হেনার মুখে। স্বপ্ন দেখেছিলেন এবার বুঝি সুখ ফিরল সংসারে।
কিন্তু কথায় আছে ‘অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়’। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস শুরুর প্রথম বর্ষায়ই হেনার সেই স্বপ্নে ‘গুড়েবালি’।
হেনা আক্তার বলেন, ‘ঘরে ওঠার পর থেকে নানা সমস্যায় ভুগছি। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি জমে থাকে। সংসারের কাজ করতে পারি না। ডুবে যায় শৌচাগার। বন্ধ হয়ে পরে রান্না-বান্না।’
শুধু হেনা আক্তার নয়। কাকাইলছেও আশ্রয়ণের ৩০টি পরিবারের একই অবস্থা। এমন সীমাহীন দুর্ভোগের কারণে অনেকেই আশ্রয়ণের ঘর ছেড়ে বসবাস করছেন অন্যত্র। আর নিজেদের বসতঘর থাকায় ঘর বরাদ্দ পাবার পরও আশ্রয়ণের ঘরে আসেনি ১৩ পরিবার। আশ্রয়ণের বাসিন্দারা বলছেন, অপরিকল্পিত নির্মাণ ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করার ফলে আশ্রয়ণের ঘর পেয়েও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তারা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের কালনী নদীর পাশে প্রথম ধাপে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৫১টি ঘর উপকারভোগীদের মাঝে হস্থান্তর করা হয়। হস্তান্তরের পর ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বন্যায় ঘরগুলোর সামনে ও চারপাশে পানি উঠে যায়। বন্যার পানি নামার পর পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর সামনে অপরিকল্পিতভাবে মাটি ভরাট করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই মাটি ভরাট এখন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ঘরে প্রবেশ করছে পানি। এমনকি সেই পানিতে শৌচাগার ও ডুবে যায়। এতে দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে পড়ে অনেকেই আশ্রয় খুঁজছেন অন্যত্র।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা অনিলা শীল বলেন, ‘আমরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে সরকারের দেওয়া উপহারের ঘরে উঠেছি। কিন্তু আশ্রয়ণের ঘরে এসে আমাদের সেই স্বপ্নই ভেঙে গেছে। সামান্য বৃষ্টির পানিতেই জলাবদ্ধতায় ঘরে হাঁটু পানি জমে যায়। আবার খাবার পানিরও সংকট। অধিকাংশ টিউবওয়েলই নষ্ট।’
তোয়াব মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টির পানি জমে টয়লেটগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে বিপাকে পড়তে হয়। কয়েকটি ঘরে ফাটলও দেখা দিয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
আব্দুস সামাদ আনসারী বলেন, ‘সরকারের ঘর পেয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছিলাম। কিন্তু জলাবদ্ধতাসহ নানা দুর্ভোগে দিনানিপাত করতে হচ্ছে আমাদের।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা নিরসনে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। কাকাইলছেও আশ্রয়ণ প্রকল্পে জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েছে। পানি নিষ্কাশনসহ সব সমস্যা নিসরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ঘর বরাদ্ধ পেয়েও ঘরে বসবাস না করাদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তালিকা করে জানা গেছে ১৩টি ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশক্রমে ঘরগুলো পুনরায় নতুন ভূমিহীনদের মাঝে শিগগিরই বরাদ্দ দেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন