বরিশাল বিএনপিতে গ্রুপিং দীর্ঘদিনের। এ গ্রুপিংয়ের কারণে ‘কেন্দ্রীয় থেকে জাতীয়’ সব কর্মসূচি পালন হচ্ছে পাল্টাপাল্টি এবং বিচ্ছিন্নভাবে। বিশেষ করে ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী দলের অভ্যন্তরে এমন গ্রুপিং আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগের আমলে নিষ্ক্রিয় এবং রাজনীতিকে বিদায় জানিয়ে দেশত্যাগী সুবিধাভোগী বিএনপি নেতাদের নিয়ে কোরাম ভারি করা নেতারা সব কর্মসূচিই পালন করছেন পাল্টাপাল্টিভাবে।
এমনকি শুক্রবার (৩০ মে) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীর কর্মসূচিতে একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
মহানগর বিএনপির সাবেক এবং বর্তমান নেতারা চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পালন করেন শাহাদাতবার্ষিকী, যা দলের অভ্যন্তরে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পালটা কর্মসূচি পালন করা দলের একাংশের নেতাকর্মীদের ‘কুচক্রী মহল’ আখ্যা দিয়ে দলীয় প্যাডে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি।
শুক্রবার রাতে দেওয়া ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান, সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীন এবং মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার।
বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন সময় বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির অভ্যন্তরে বিভাজন ও সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে বরিশাল বিএনপি ব্যানারে কিছু অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। আমরা বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতারা তাদের এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। অন্যথায় এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমরা বাধ্য হবো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল মহানগর বিএনপির ৪২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতেই বিভক্তি রয়েছে। এ কারণে কমিটির যে কোনো সাংগঠনিক সভায় ১২-১৪ জনের বেশি নেতা উপস্থিত হচ্ছেন না। কমিটির একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছে আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক এবং সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার।
অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন। বর্তমান মহানগর বিএনপি আয়োজিত যে কোনো কর্মসূচিতেই পালটা কর্মসূচি দিচ্ছেন আফরোজা খানম নাসরিন। যদিও জ্যেষ্ঠদের বাদ দিয়ে ছাত্রদল নেত্রী নাসরিনকে সর্বাধিক মূল্যায়ন করে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন গ্রুপিং সৃষ্টির নেপথ্যে বলে দাবি তার প্রতিপক্ষের।
অপরদিকে কমিটির বাইরেও বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির পদবঞ্চিত নেতারাও বড় একটি বলয় তৈরি করেছেন। যারা নিজেদের ‘বরিশাল বিএনপি’ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। ‘বরিশাল বিএনপি’ ব্যানারেই আয়োজন করছেন পাল্টা কর্মসূচি। এই অংশটির নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার। এর বাইরে মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদও নেতৃত্ব দিচ্ছেন আরেকটি অংশের।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বরিশালে বিএনপির ব্যানারে একাধিক কর্মসূচি পালন হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর চকবাজার এবায়দুল্লাহ্ মসজিদে বরিশাল মহানগর বিএনপির সাবেক নেতাদের নিয়ে দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠান আয়োজন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার।
একই সময় নগরীর সদর রোড অশ্বিরী কুমার টাউন হলে আলোচনা সভা ও দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠান আয়োজন করে বরিশাল মহানগর বিএনপি। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক। সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার।
শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে নগরীর গির্জা মহল্লা এলাকায় একে স্কুল মিলনায়তনে দোয়া-মোনাজাত এবং আলোচনা সভা করে মহানগর বিএনপির অপর অংশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন- কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন। সভাপতিত্ব করেন যুগ্ম আহ্বায়ক মুসা কাজল।
নগরীর মুসলিম গোরস্তান মসজিদে দোয়া-মোনাজাত আয়োজন করেন মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ। যেখানে মহানগর বিএনপির সাবেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তাছাড়া অশ্বিনী কুমার হলে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান করে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপি। এতে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান। সঞ্চালনায় ছিলেন- সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীন।
দক্ষিণ জেলার বিপক্ষে গিয়ে বিকেলে শিল্পকলা একাডেমিতে ওলামা দলের ব্যানারে কর্মসূচির আয়োজন করেন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজন। একসময় মজিবর রহমান সরোয়ারের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে রাজনীতিকে বিদায় জানিয়ে দেশত্যাগী রাজন এখন সরোয়ার কোরামেই রাজনীতি করছেন।
জেলা ও মহানগর বিএনপির সতর্ক বার্তা প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, যারা এই নোটিশ দিয়েছেন, বরিশাল বিএনপি বললে তাদের গায়ে বাঁধে কেন। বরিশাল বিএনপি তো শুধু জেলা এবং মহানগরে সীমাবদ্ধ নয়; বরিশাল বিভাগও তো আছে। বরিশালে তো এখন পদবঞ্চিত সাবেক নেতাদের সংখ্যাই বেশি। এখন তারা প্রোগ্রাম করলে তো সাবেক নেতাই পরিচয় দেব। এখানে দোষের কী আছে।
তিনি আরও বলেন, মহানগর বিএনপিতেই বিভক্তিতে ভরা। শুনেছি তাদের কমিটির মিটিংয়ে সব মিলিয়ে ১৪ জন অংশ নিয়েছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীতেও তো আফরোজা খানম নাসরিন একে স্কুলে আলাদাভাবে প্রোগ্রাম করেছে। আর নজরুল ইসলাম খান রাজন শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা ওলামা দল নিয়ে প্রোগ্রাম করেছে। যারা কমিটিতে নেই তারা জেলা মহানগরের নাম দিয়ে কর্মসূচি করা উচিত না। আমি যেসব প্রোগ্রাম করি সেগুলো আমার আয়োজনেই হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার বলেছেন, মূলত মহানগর বিএনপিতে আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বোঝাপড়া) নেই। এ কারণেই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হচ্ছে। তবে আমি মনে করি, একসঙ্গে মিলে করতে পারলে ভালো হতো। কারণ ঐক্যই শক্তি। ঐক্য নেই বলেই এমনটা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
আর্কাইভ 
| ০২ জুন ২০২৫ 
