আসন্ন ঈদুল আজহায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে যানজট নিরসনে ১২টি হটস্পটে (বিশেষস্থান) বিশেষ নজরদারি চলছে। পাশাপাশি ২৬টি স্পষ্টে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কুমিল্লা অংশে যানজট নিরসনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে মাঠ প্রশাসন।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের এসপি মো. খায়রুল আলম জানান, কুমিল্লা অংশের দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত ২৬টি পয়েন্টকে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১২টি পয়েন্ট বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এসব স্পষ্টে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে টহল বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোরবানির পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি এবং মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা রোধেও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই সব এলাকায় বিশেষ নজরদারি ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
যানজটপ্রবণ হটস্পটগুলো হলো-দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজার ও ইলিয়টগঞ্জ বাজার। চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাজার ও চান্দিনা বাজার। বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজার ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কংশনগর বাজার। আদর্শ সদর উপজেলার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট মোড় ও আলেখার চর। সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, সুয়াগাজী বাজার ও কোটবাড়ি ইউটার্ন এবং চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চৌদ্দগ্রাম বাজার।
এদিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন।
জানা যায়, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় যৌথবাহিনী সোমবার চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায়। এ সময় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে ২টি মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ সময় মোট ৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় এবং ১টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। ওই চেকপোস্টে সেনা সদস্যরা অংশ নেন। যান চলাচলে শৃঙ্খলা নিশ্চিত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর এই তৎপরতাকে স্বাগত জানিয়েছে যাত্রীরা। কুমিল্লামুখী রয়েল ট্রান্সপোর্টর যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নামিরা নাহিয়ান জানান, এতে সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে। চলাচল নিরাপদ থাকবে।
র্যাব-১১ জানিয়েছে, পবিত্র ঈদ উল আজহাকে সামনে রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে একযোগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি, নিয়মিত চেকপোস্ট এবং হাইওয়েতে রোবাস্ট পেট্রোলিং। শনিবার (৩১ মে) থেকে এ অভিযান চলছে।
র্যাব-১১ কোম্পানি অধিনায়ক লে. কমান্ডার মাহমুদুল হাসান জানান, র্যাব-১১ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় হাইওয়ে ও কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাধারণ চেকপোস্টের পাশাপাশি বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে এবং রোবাস্ট পেট্রোলিং পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঈদের সময় যাত্রীদের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো যেকোনো অপরাধ প্রতিরোধে সাড়াশি অভিযান চলছে। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এই বিশেষ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
এদিকে রোববার কুমিল্লা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটির সভা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিআরটিএ, বাস মালিক সমিতি, বাজার কমিটির প্রতিনিধি ও রোভার স্কাউটের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জানানো হয়, ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহায়ও মহাসড়কে যানজটমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী সহযোগিতা করবে।
যানজট নিরসনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও সভায় জানানো হয়। যাত্রীবাহী পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধে পর্যবেক্ষক দল মাঠে থাকার কথাও জানানো হয়। সভায় পরিবহন মালিকদের স্ট্যান্ডে প্রকাশ্যে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, মহাসড়কের ওপর বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা বন্ধে চালকদের সচেতন করতে মালিক-শ্রমিক নেতাদের অনুরোধ করা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা মুস্তফা, ক্যাপ্টেন মাহবুব তাজ, বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আলম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন গ্রুপের মহাসচিব জলিস আব্দুর রব, পরিবহন নেতা মো. ইদ্রিস মিয়া, মোহাম্মদ আলী হোসেন, জেলা রোভার স্কাউটের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন লিটন প্রমুখ।
মন্তব্য করুন