বরগুনার তালতলীতে ঘটনাস্থলে না থেকেও মো. মাহবুবুর রহমান নামে এক ছাত্রদল নেতকে হত্যা মামলার আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রদল নেতাকে ষড়যন্ত্রমূলক আসামি করায় ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন দলটির নেতারা।
ছাত্রদল নেতা মো. মাহবুবুর রহমান তালতলী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ও উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের ছোট ভাইজোড়া গ্রামের মো. মস্তফা হাওলাদারের ছেলে।
জানা যায়, উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের ছোট ভাইজোড়া গ্রামের সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (৬ জুন) রাত ৯টার দিকে মো. সুলতান হাওলাদারের পরিবার ও মো. শাহজালাল হাওলাদারের পরিবারের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের ৪ জন আহত হয়।
আহতরা হলেন- মো. দুলাল হাওলাদার, মোসা. নাসরিন, মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদার ও মোসা. হনুফা। তারা সবাই রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। পরে খবর পেয়ে আহত মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদারকে দেখতে তার ভাই মো. জাকির হোসেন হাওলাদার রাত ১১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।
এ সময় জাকির হোসেন হাসপাতালে ঢোকার সময় পা খেতলে পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ ঘটনায় শনিবার (৭ জুন) মো. জাকির হোসেনকে হত্যার অভিযোগ এনে ৬ জনকে এজাহারভুক্ত ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে তালতলী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন তার স্ত্রী মোসা. খাদিজা বেগম। এ মামলায় ৬ নম্বর আসামি করা হয় ছাত্রদল নেতা মো. মাহবুবুর রহমানকে।
মামলায় এজাহারভুক্ত অন্যান্য আসামিরা হলেন- মো. দুলাল হাওলাদার, মো. হোসাইন তালুকদার, মো. রাজিব হাওলাদার, মো. সুলতান হাওলাদার ও মো. আবু-সালেহ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের ছোট ভাইজোড়া গ্রামের সরকারি আশ্রয়ণের পুকুরে মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী মোসা. হনুফা বেগমসহ আসামিরা মাছ ধরছিল। উক্ত মামলার ১ নম্বর সাক্ষী মো. জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আসামিদের আগে থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল।
পরে মাছ ধরা শেষ হলে সাক্ষীরা ও আসামিরা মিলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাছ বণ্টন করছিল। এ সময় আসামিরা প্রথমে হনুফা বেগমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। হনুফা আসামিদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কিল ও ঘুষি মারতে থাকে। তখন তার চিৎকারে অন্যান্য সাক্ষীরা এগিয়ে আসলে আসামিরা তাদের হাতে থাকা লোহার রড, হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করেন।
একপর্যায়ে আসামিরা জাকিরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি ও বুকে সজোরে একাধিক লাথি মারতে থাকে। এতে জাকির ঘটনাস্থলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে যায়। এ সময় তাকে রক্ষা করার জন্য মামলার ১ নম্বর সাক্ষী জাহাঙ্গীর হাওলাদার এগিয়ে আসলে অন্য আসামিরা তাকে রড, হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে পিটায়।
পরে জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে বুকে ব্যাথা অনুভব করলে সাক্ষীরা তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে শনিবার (৭ জুন) রাত ১টা ৪৭ মিনিটে মৃত ঘোষণা করেন।
ছাত্রদল নেতা মাহাবুবুর রহমান বলেন, এ মামলায় আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে পতিত আওয়ামী দোসরা বাদীকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আসামি করেছে। এ ছাড়াও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আমাকে এই হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না।
মামলার বাদী ও নিহত জাকির হোসেনের স্ত্রী মোসা. খাদিজা বেগম বলেন, আমি মারধরের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। সাক্ষীদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলায় আসামিদের নাম দিয়েছি। আমি আসামিদের কাউকে চিনি না। মামলায় নির্দোষ কাউকে আসামি করা হলে তাকে মামলা থেকে বাদ দিয়ে দেব।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান অসীম বলেন, ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে হয়রানিমূলক আসামি করা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একইসঙ্গে এই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ছাত্রদল নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান এ ঘটনায় জড়িত না থাকলে তদন্তসাপেক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন