চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠ। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক বিকাশে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত ৬০টির মাঠ নেই বা একেবারেই অপ্রতুল।
জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। পর্যাপ্ত সরকারি জমি না থাকায় ও দীর্ঘদিন পরিকল্পনাহীনভাবে বিদ্যালয় স্থাপনের কারণে মাঠ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের জায়গা এক প্রভাবশালী দখল করে রেখেছে। যে কারণে আমরা বাচ্চাদের খেলাধুলার মাঠ তৈরি করে দিতে পারিনি।
নবাবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহমিনা পারভীন নিপু জানান, আমাদের বিদ্যালয়টি রাস্তার পাশে হওয়ায় খেলার মাঠ নেই। মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসের পরও ঠিকভাবে সময় কাটাতে পারে না।
ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শামিম আহম্মেদ জয় বলেন, মাঠ না থাকায় ছেলে বাসায় বসেই মোবাইল ঘাঁটে। আগে আমরা মাঠে খেলতাম। এখনকার বাচ্চারা যেন বন্দি জীবন কাটাচ্ছে। খেলাধুলার অভাবে তারা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
শিক্ষা ও শিশু বিকাশ নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলার মাঠ না থাকলে শিশুদের মধ্যে স্থূলতা, বিষণ্নতা ও আচরণগত সমস্যা বেড়ে যায়। ফলে এটি দীর্ঘমেয়াদে জাতির ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ষাটনল ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম সরকার বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ইউনিয়ন পরিষদের খালি জমিগুলো শিশুদের খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত করতে। পাশাপাশি এলাকাবাসীকেও আহ্বান জানাচ্ছি বিদ্যালয়গুলোর পাশে জায়গা থাকলে তা ব্যবহারে সহযোগিতা করতে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, উপজেলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যালয়ে খেলাধুলার জন্য নির্ধারিত জায়গা নেই। আমরা এরই মধ্যে মাঠবিহীন বিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করেছি। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের সহযোগিতায় বিকল্প জায়গা নির্ধারণের কাজ চলছে। কয়েকটি এলাকায় মাঠ উন্নয়নের প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করি ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, শিশুদের সুস্থ বিকাশে খেলার মাঠ অপরিহার্য। আমরা ইউনিয়নভিত্তিক সরকারি খালি জায়গাগুলো চিহ্নিত করছি, যাতে অন্তত বিদ্যালয়গুলো সাময়িকভাবে সেগুলো ব্যবহার করতে পারে। নতুন কোনো বিদ্যালয় স্থাপন বা উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার সময় অবশ্যই মাঠের বিষয়টি বাধ্যতামূলকভাবে বিবেচনায় আনা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন