রজনীকান্ত সেনের স্বাধীনতার সুখ কবিতার ভাষায় বলতে হয়, ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ-বৃষ্টি ঝড়ে।’ শুধু পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাবুই পাখির শৈল্পিক কথা জানতে পারলেও বাস্তবে তার দেখা মেলা ভার। আগের মতো গ্রামগঞ্জে এখন আর চোখে পড়ে না বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন সেই বাসা। বনায়ন ধ্বংস এবং পরিবেশ বিপর্যয়য়ের ফলে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির বাসা।
আগে গ্রাম-অঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছ, নারিকেল গাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা গেলেও এখনকার চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। এখন তা আর সচরাচর চোখে পড়ে না। খড়, তালপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে বাবুই পাখি বাসা বাঁধে। বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা পড়ে না। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তোলে বাবুই পাখি আজ আমরা হারাতে বসেছি।
বাবুই পাখি এক মৌসুমে ৬টি বাসা তৈরি করতে পারে। এপ্রিল-মে মাসে বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। এ সময় সাধারণত তারা তাল, খেজুর নারিকেল গাছের ডালে বাসা তৈরি করতে ব্যস্ত থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই বিভিন্ন জায়গা থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে।
ঠাকুরগাঁয়ের হরিপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাল, নারিকেল, খেজুর গাছে এখনো চোখে পড়ে বাবুই পাখির বাসা। তবে তালগাছেই তাদের একমাত্র নিরাপদ জায়গা। সেখানে তারা বাসা বাঁধতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কেননা তালগাছ বেশ ঝাপড়ানো থাকে। তা ছাড়া তালগাছ থেকে বছরে একবার ফল সংগ্রহ করা হয়ে গেলে তারা বাকি সময় স্বাচ্ছন্দ্যে বাসা বাঁধে।
হরিপুরে পাখি নিয়ে কাজ করা খামারি রাশেদুল ইসলাম রাসেল কালবেলাকে জানান, বিলুপ্তপ্রায় বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে আমরা বিমোহিত হতাম। এখন এসব পাখি উপযুক্ত বাসস্থানের কারণে বিলুপ্ত হতে চলেছে। আমরা যদি এসব বাবুই পাখির বাসস্থান নিশ্চিত করতে পারি তাহলে আমরা পাখিদের অভয়ারণ্য তৈরি করতে পারব।
হরিপুরে পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘অক্সিজেন’-এর সভাপতি মোজাহেদুর ইসলাম ইমন কালবেলাকে বলেন, পাখিবিনাশী কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে বাবুই পাখির সংখ্যা কমতে কমতে এমন একটা সময় আসবে যখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাবুই পাখি হয়তো আর সরাসরি চোখে দেখতে পাবে না। খুঁজে বাবুই পাখির ছবি দেখতে হবে।
মন্তব্য করুন