অবশেষে খুলনার আলোচিত এসআই সুকান্ত দাসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের একটি যৌথ দল চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার কালবেলাকে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
সদর থানায় দায়ের হওয়া একটি বাড়ি ভাঙচুর মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তারসংক্রান্ত বিধি-বিধান অনুসরণ করতে সময় লেগেছে। তাকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানানো হয় কেএমপির বিবৃতিতে।
এদিকে, সুকান্ত দাসকে গ্রেপ্তারের পর এবার পুলিশ কমিশনারের অপসারণের দাবিতে মাঠে নেমেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেল ৩টায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তর ঘেরাও করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন উপস্থিত ছিল। কেএমপি সদর দপ্তরের মূল ফটকের সামনের সড়ক আটকে বিক্ষোভ শুরু করে তারা।
বিএনপির নেতারা বলছেন, ৩৬ জুলাই পরবর্তী সময়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খুলনার চিহ্নিত ডেভিলদের গ্রেপ্তারে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। মহানগরীর আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি কমিশনারের ব্যর্থতার ফসল। সন্ত্রাসীদের পদচারণায় খুলনা নগরী এখন প্রকম্পিত। হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভাগীয় শহর খুলনার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এ ধরনের ব্যর্থ কর্মকর্তা দিয়ে মোটেই সম্ভব নয়। পুলিশ কমিশনার এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দিয়ে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে শুধু ব্যর্থতার পরিচয় দেননি। তিনি পতিত সরকারের পক্ষ অবলম্বন করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা মহানগর সিনিয়র মুখপাত্র রুমি রহমান জানান, এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন কেএমপি কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের খুলনা মহানগরের সদস্যসচিব জহুরুল তানভীর বলেন, খুলনার পুলিশ কমিশনার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তিনি খুলনায় আসার পর থেকে এখানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তিনি এসআই সুকান্তের মতো লোককে ছেড়ে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের দোসরদের তিনি গ্রেপ্তার করছেন না। এমন পুলিশ কমিশনারকে খুলনায় দেখতে চাই না। খুলনার মাটিতে আওয়ামী ফ্যাসিস্টের কোনো কর্মকর্তা থাকতে পারবে না।
এর আগে মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেলে নগরীর ইস্টার্ন গেট এলাকা থেকে এসআই সুকান্ত দাসকে মারধর করে খানজাহান আলি থানা পুলিশের কাছে তুলে দেয় স্থানীয়রা। রাতেই তাকে ছেড়ে দেয় খান জাহান আলি থানা পুলিশ। এসআই সুকান্তের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর নিপীড়ন ও গণগ্রেপ্তার চালানোর অভিযোগ ছিল। অভ্যুত্থানের পর তার বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, এসআই সুকান্ত কর্মরত ছিলেন সোনাডাঙ্গা ও সদর থানা এলাকায়। ফ্যাসিবাদ সরকারের প্রতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন তিনি। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই গা ঢাকা দেন তিনি। পরে বদলি হন ঢাকায়। এখন চুয়াডাঙ্গার একটি পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত আছেন বলেও জানা গেছে।
এসআই সুকান্তের নামে খুলনা সদর থানায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় গত ১২ ডিসেম্বর মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে ডিবিতে তদন্তাধীন। এছাড়া বিএনপির নগর সভাপতি শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুরসহ দুটি মামলা চলমান রয়েছে।
মন্তব্য করুন