খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাসেল ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তনয় রায়ের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলন এবং ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে মো. রাসেল ফেসবুকে জুলাই অভ্যুত্থানকে বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করতে থাকে। দেশে স্বৈরাচারী সরকারের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে রাসেল সেগুলো নিয়েও কটাক্ষ করে।
রাসেল ‘লাল গেঞ্জি’ বলে জেনারেশন ‘জি’ অর্থাৎ জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের কটাক্ষ করে।
এ বিষয়ে ফিজিক্স ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তালহা মাহমুদ বলেন, ‘মো. রাসেল দীর্ঘদিন ধরে জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রদের হুমকি দিয়ে আসছে। আমরা এরই মধ্যে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছি। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তদন্তসাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
এ বিষয়ে আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান মুন্সি বলেন, ‘ও দীর্ঘদিন থেকে এ ধরনের কাজ করে আসছে। ও প্রায় সময় ছাত্রলীগের পোস্ট শেয়ার দিয়ে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। আমি চাইব প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত ধারায় তার বিচার করবে। যেন পরবর্তী সময়ে কেউ এ ধরনের কাজ করতে না পারে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান বলেন, আমার দৃষ্টিতে এটি একটি অপরাধ। কারণ, আমি এ দেশের তৌহিদি জনতার একজন। যারা শুধু নিজের ধর্মকেই নয়; অন্য ধর্মকে সম্মান করে।
রাসেল ও তনয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে এ বিষয়ে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এরই মধ্যে একটি অভিযোগ পেয়েছি এবং বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ধারণা, রাসেল নিষিদ্ধ সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোস্ট, কমেন্ট, জুলাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হুমকিমূলক কথা শিক্ষার্থীদের মনে সংশয়ের সৃষ্টি করেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রাসেল বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে ধর্ম অবমাননা এবং হুমকির অভিযোগ এনেছেন, তার বাস্তব ভিত্তি রয়েছে। আগে কোনো প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন না হওয়ায় ভুলগুলো বারবার হয়েছে। তবে এখন আমি প্রতিজ্ঞা করছি এই ধরনের কাজ আর কখনো করব না। পূর্ববর্তী সমস্ত কর্মকাণ্ডের জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।’
অন্যদিকে তনয় রায় বলেন, ‘সম্প্রতি একটি স্টোরি শেয়ার করেছি যেটি আমি অজ্ঞতাবশত করেছি। বিষয়টি উপলব্ধি করে আমি অনুতপ্ত এবং ভবিষ্যতে এমন কোনো ভুল হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
এ বিষয়ে ছাত্র বিষয়ক পরিচালক ড. মো. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘হল থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ হস্তান্তর করা হয়েছে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আমরা বিষয়টা তদন্ত করব এবং চেষ্টা করব নয় কার্যদিবসের ভেতর এ অভিযোগের নিষ্পত্তি ঘটনোর।’
উল্লেখ্য, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়ে প্রশাসনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন