কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার সরকারি গুদামে ধান রাখা নিয়ে খাদ্য পরিদর্শকের ঘুষ নির্ধারণের কথোপকথনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। উপজেলার সরকারি খাদ্য গুদামের ভেতরে একটি কক্ষের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সরকারি খাদ্য পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন ভূইয়া সরাসরি একজন কৃষকের কাছে ঘুষ চাচ্ছেন।
প্রতি টন ধানে দুই হাজার টাকা অতিরিক্ত অর্থ দাবি করে খাদ্য পরিদর্শক বলছেন, সরকারি রেট অনুযায়ী এক টন ধানের দাম ৩৬ হাজার টাকা। অথচ বাজারে ৩০ হাজার টাকা। সেখানে ৬ হাজার টাকা বেশি পাচ্ছেন। আমাকে তো অর্ধেক দিতে বলিনি। তিন ভাগের এক ভাগ দিতে বলেছি।
তবে প্রথমে ভিডিওটি নিজের বলে স্বীকার করলেও পরে দাবি করেন, এটি এডিট করা।
তথ্য বলছে, সরকারি রেট অনুযায়ী প্রতি মণ ধানের দাম নির্ধারিত ১,৪৪০ টাকা। একজন কৃষক সর্বোচ্চ তিন টন পর্যন্ত ধান সরবরাহ করতে পারেন। সরকারি দামে প্রতি টনে কৃষক পাচ্ছেন বাজার দরের চেয়ে গড়ে ছয় হাজার টাকা বেশি। শুধু ঘুষ নয়, প্রতি মণের ওজন হিসাবেও চলছে কারচুপি। ৪০ কেজির জায়গায় ৪২ কেজি করে মেপে নিচ্ছেন। ফলে এক টন ধানে আরও ৯০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই কর্মকর্তা।
উপজেলা এ অফিসের চিত্র আরও ভয়াবহ। নিরাপত্তা প্রহরী মোহাম্মদ শাহ আলমের বাসা অফিসের পাশে হওয়ায় অফিস করছেন লুঙ্গি পড়ে। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে বলয় তৈরি করেছেন। তার কথা অনুযায়ী কৃষক ধান দিতে পারেন। তা না হলে ধান দেওয়া তো দূরের কথা তার কথা ছাড়া অফিসের ভেতরে ঢুকা নিষেধ। কাগজ প্রস্তুত বাবদ প্রতি টনে তিনি নিচ্ছেন ২৭০ টাকা।
বিষয়টি খাদ্য পরিদর্শকের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকের দিকে তেড়ে আসেন। একপর্যায়ে গালাগালা ও মোবাইল ছুড়ে ফেলে দেন।
আরও জানা যায়, এই মৌসুমে অষ্টগ্রাম গুদামের লক্ষ্যমাত্রা ১,৭৯৫ টন। এর ৯৮ শতাংশ ইতোমধ্যে সংগ্রহ হয়ে গেছে। গড় হিসাব অনুযায়ী কৃষকদের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের পরিমাণ প্রায় অর্ধকোটি টাকা, এছাড়াও আরো প্রায় ১০ লাখ গেছে নিরাপত্তা প্রহরী শাহ আলমের পকেটে।
কৃষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমি এবারই প্রথম সরকারি গুদামে ধান নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ধানের আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের বেশি হওয়ার পরেও তারা আমার ধান গ্রহণ করেনি। অথচ পাশের লোকের একই ধরনের ধান তারা রেখে দিয়েছে। গুদাম কর্মকর্তা আমার কাছে তিন হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। আমি না দেওয়ায় ধান নেয়নি। ওই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ আমল থেকেই ঘুষ খাচ্ছে। চলতি বছরও সে অনেক টাকা দুর্নীতি করেছে। আমি চাই, এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হোক। সরকারের কাছে এটাই আমার আবেদন।
অন্য এক কৃষক শামসুল হক বলেন, সরকারি গুদামে ধান নিয়ে গেলে তারা বলে ধান ভিজা। পরে প্রতি টন ধানে দুই হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিলে আবার সেই ধানই ‘ঠিকঠাক’ হয়ে যায়! এ ছাড়া গুদাম পর্যন্ত ধান পৌঁছাতে গাড়ি ভাড়া দিতে হয়। সবমিলিয়ে যে খরচ হয়, তাতে বাজারদরেই ধান বিক্রি করাই ভালো মনে হয়। তাই আমি ধান নিয়ে যাই না।
তবে অভিযুক্ত খাদ্য পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন ভূইয়া অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি কোনো ঘুষ চাইনি, ভিডিওটি বিভ্রান্তিমূলকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কারও সঙ্গে কোনো সময় আমার এমন কথা হয়নি। এ সময় যারা সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করেছেন তাদের তালিকা চাইলে তিনি তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
অষ্টগ্রাম উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. দিলশাদ জাহান জানান, এ বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখব। আমি ওই কর্মকর্তার সঙ্গে নিজেই কথা বলব। যদি আমরা এই অভিযোগের সত্যতা পাই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির বলেন, কৃষকদের সঙ্গে যে বিষয়টি ঘটেছে আমরা তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য করুন