কুমিল্লার মুরাদনগরে একই পরিবারের ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল ৯টায় দিকে বাঙ্গরা থানার আকবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মোবাইল চুরি নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, কড়ইবাড়ি গ্রামের জুয়েল মিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫), তার ছেলে রাসেল মিয়া (২৮) ও মেয়ে জোনাকি আক্তারকে (২৩) এলাকাবাসী পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ছাড়া নিহতের আরেক মেয়ে রুমাকে (২৮) গণপিটুন দেওয়া হলে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢাকায় তার চিকিৎসা চলছে।
পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকলেও মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার নজির আহম্মেদ খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ নিয়ে এলাকায় সামান্য উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে কড়ইবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন কড়ইবাড়ি বাজারে স্কুলের কাগজপত্র ফটোকপি করতে যান। ওই ফটোকপি দোকানে একইসঙ্গে ওষুধও বিক্রি করা হয়। ওই সময় ঘুমের ট্যাবলেট কিনতে একই দোকানে একজন কিশোর যান।
দোকান থেকেই ওই শিক্ষকের মোবাইল ফোনটি চুরি হয়। এতে শিক্ষক সবাইকে জানালে হায়দরাবাদ সড়কের মাথা থেকে ওই কিশোরকে ধরে মোবাইলটি উদ্ধার করে। ওই কিশোর রোখসানা আক্তার রুবির আত্মীয়। রুবিদের একাধিক বাড়ি মার্কেট কড়িবাড়ি বাজারে হওয়ায় তারা বেশ প্রভাব বিস্তার করে এলাকায়।
পরে রুবি, তার মেয়েরা, জামাই মনির ও ছেলে রাসেল মোবাইল চুরির ঘটনা নিয়ে তর্কে জড়ায়। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তারা শিক্ষক রুহুল আমীন ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার বাচ্চু মিয়াকে কিল-ঘুষি মারে। ঘটনা জানতে পেরে শিক্ষক রুহুল আমীনের ভাতিজা রবিউল ও ফয়েজ এগিয়ে এলে তারাও মারধরের শিকার হয়।
পরে একই দিন বাচ্চু মেম্বারসহ রবিউল ও ফয়েজকে দ্বিতীয় দফায় তাদের বাড়ি গিয়ে আবার মারধর করা হয়। এ আচরণে প্রতিপক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বুধবার বিকেলে তিন রাস্তার মোড়ে মারধরের শিকার বাচ্চু মেম্বারসহ তারা একত্রিত হয়। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহও সেখানে আসেন।
সে সময় বিক্ষুব্ধরা তাদের আর ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে প্রতিপক্ষরা একত্রিত হয়ে ওই বাড়িতে হানা দেয়।
এতে রুবি ক্ষিপ্ত হয়ে বাচ্চু মেম্বারকে থাপ্পড় মারে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিপক্ষরা রুবি ও তার মেয়ে জেনাকিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাওয়া রুবির ছেলে রাসেল মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটে আসে। বাড়ির গেটে আসার পরপরই উপস্থিত জনতা রাসেলের ওপর চড়াও হয়। ঘটনাস্থলে রাসেলেরও মৃত্যু ঘটে। অপর মেয়ে রুমা মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে ছিল। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।
ঘটনার পর বাড়িতে নিহত রাসেলের স্ত্রীর কোলে ২ বছরের বাচ্চাকে আর্তনাদ করতে দেখা যায়। তার দাবি, রুবি আক্তারের জামাই ও আরেক মেয়ে নিখোঁজ। রাসেলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
প্রতিপক্ষদের দাবি, তারা পালিয়ে গেছে। রুবির এক ছেলে ৪ মেয়ে বলে জানা গেছে। মেয়ের জামাইরাসহ সবাই মাদক কারবারি।
আকবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম জানান, নিহত পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে মাদক কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত ছিল। মোবাইল চুরির ঘটনাসহ সবমিলিয়ে সকালে ওই পরিবারের ৪ সদস্যকে প্রতিপক্ষ পিটুনি দেয়। এতে তিনজন ঘটনাস্থলে মারা যায়। একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম মানিক কালবেলাকে বলেন, মাথাসহ পুরো শরীরে জখম নিয়ে রুমাকে হাসপাতালে আনা হয়। তখন সে অজ্ঞান ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সকালে আকবপুর ইউনিয়নের কড়াইবাড়ি গ্রামে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিন জনের লাশ উদ্ধার করে। তারা একই পরিবারের সদস্য। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনিব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
পুলিশ সুপার নজির আহমেদ খান জানান, আইনি প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
মন্তব্য করুন