খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক নেতা মোল্লা মাহবুবুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত শুক্রবার (১১ জুলাই) দুপুরে নগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়ায় নিজ বাড়ির সামনে তাকে গুলি করা হয়।
পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাকে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। মোল্লা মাহবুবুর রহমান দৌলতপুর থানা যুবদলের সহসভাপতি ছিলেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় রাম দা হাতে তার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ওই রাতেই সংগঠন থেকে মাহাবুবকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরও তিনি নিয়মিত দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।
মৃত্যুর পরদিনই মাহবুবের কুয়েটে যাওয়ার বিষয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তার স্ত্রী এরিনা সুলতানা। তিনি জানান, দলের নির্দেশেই কুয়েটে গিয়েছিলেন তিনি।
শনিবার (১২ জুলাই) সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘মাহবুব সেদিন নিজের ইচ্ছায় কুয়েটে যায়নি। দলের নির্দেশে ছাত্রদলের ছেলেদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সেখানে গিয়েছিলেন।’
এরিনা বলেন, দৌলতপুর থানা বিএনপির সুধী সমাবেশকে কেন্দ্র করে মাহাবুবকে হুমকি-ধামকি দেওয়া শুরু হয়। ওই ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে, যেখানে জাকির বাদী ছিল। ওই মামলায় আসামি দেওয়া নিয়ে বাড়ি এসে মাহাবুবকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। মাহাবুব ছিল প্রতিবাদী ও দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। দলের বিপদে মাহাবুব সবার আগে থাকত। কুয়েটের ঘটনায় মাহাবুব নিজে থেকে যায়নি। সেখানে গিয়েছিল দলের নির্দেশে।
তিনি আরও বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেন গেলা, সে বলেছে- আমি নিজে গেছি নাকি, ছাত্রদলের ছেলেদের বাঁচানোর জন্য ওপরের নির্দেশে গিয়েছিলাম।
একই কথা বলেছেন মাহাবুবের শ্বশুর খুলনা মহানগর শ্রমিক দলের সাবেক নেতা আজাদ বেগ বাবু। তিনি জানান, কুয়েটে মাহাবুব নিজে থেকে যায়নি গিয়েছিল দলের নির্দেশে।
প্রসঙ্গত, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় অস্ত্র হাতে অবস্থান নেন খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদল নেতা মাহবুব। এ সময় রাম দা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরদিনই ১৯ ফেব্রুয়ারি সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দৌলতপুর থানা যুবদলের সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো অপকর্মের দায়দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
৫ আগস্টের পর এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মাহাবুব। মাদক বিক্রি নিয়ে এলাকার আরেকটি গ্রুপের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এর জেরে আগেও কয়েকবার মাহাবুবের ওপর হামলা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার দুপুরে বাড়ির সামনে নিজের প্রাইভেটকার পরিষ্কার করছিলেন মাহবুব। এ সময় মোটরসাইকেলে করে আসা তিন ব্যক্তি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। মাহবুব গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে দেয়।
দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানান, মাদক বিক্রি নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে মাহাবুবের দ্বন্দ্ব চলছিল। তার নামে মাদকসহ ৮টি মামলা আছে। এর জেরে হামলা কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন